আগের মতোই থাকছে বিয়ের বয়স
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০১৪, ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
বিতর্কের মুখে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ ও ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ রাখারই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে বাল্যবিবাহের অপরাধের বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন ও দৃশ্যমান করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছেলেদের বিয়ের বয়স কমিয়ে ১৮ ও মেয়েদের ১৬ করা যায় কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার বিষয় আলোচিত হয় এবং ‘বাল্যবিবাহ রোধ আইন, ২০১৪’ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) মেয়েদের আইনসিদ্ধ বিয়ের ন্যূনতম বয়স না কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করে, এটা করা না হলে তা হবে বাল্যবিবাহের হার কমিয়ে আনার অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এদিকে বিভিন্ন মহলে এমন প্রশ্ন উঠেছে যে, ‘বাল্যবিবাহ রোধ আইন, ২০১৪’-এর সঙ্গে ‘শিশুনীতি ২০১৩’ সাংঘর্ষিক। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুসারে শিশু বিল ২০১৩-এ ১৮ বছরের কম বয়সী প্রত্যেককেই শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়।
মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন নারী ও শিশু সংগঠন থেকেও সমালোচনা করে বলা হয়, মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা একটি পরস্পরবিরোধী চিন্তা। একদিকে সরকার নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলছে, অন্যদিকে বিয়ের বয়স কমানোর বিধান করতে চাইছে, যা দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেবে।
জানতে চাইলে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘সব দিক বিবেচনা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত দিতে হচ্ছে। আমরা মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ ও ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ রাখারই চিন্তাভাবনা করছি। এখনো আইনটি চূড়ান্ত হয়নি। প্রয়োজনে এটি আবারও মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। এ ছাড়া মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, সংসদীয় কমিটিতে যাবে। সব জায়গাতেই আলোচনা হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক সমস্যা। আর বিচারের বিষয়টি অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ কারণে দ্রুত বিচার করতে এই আইনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের তফসিলভুক্ত করা হচ্ছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বাল্যবিবাহ নিরোধের বিদ্যমান আইনটি ১৯২৯ সালের। শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আইনটি যুগোপযোগী করতে মন্ত্রণালয় নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করে। এই আইনে ২৭টি ধারা রয়েছে। জনপ্রশাসন, শ্রম মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র, আইন ও বিচার বিভাগ এই আইনের ব্যাপারে মতামত দিয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে প্রস্তাবিত আইনে ‘নাবালক’-এর সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়। এ ছাড়া ‘নাবালক’-এর সংজ্ঞায় পুরুষের ২১ বছরের কম ও নারীর ১৬ বছরের কম-এর স্থলে যথাক্রমে ১৮ ও ১৬ করার এবং ‘নাবালক’-এর জায়গায় ‘পরিণত বয়স’ শব্দটি ব্যবহারের বিষয়টি পরীক্ষা করার কথা বলা হয়। এ আলোচনার প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪’-এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী সাজা ও জরিমানা করবেন নির্বাহী হাকিম। তবে বিয়ে বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে পারিবারিক আদালতে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নির্ধারিত বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে। যাঁরা বাল্যবিবাহ পরিচালনা করেন, যাঁরা বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বর-কনে এই দণ্ডের আওতায় পড়বেন। তবে অপরাধী নারী হলে শুধু আর্থিক দণ্ড হবে, কারাভোগ করতে হবে না।
আইনানুযায়ী বিয়ের বয়স বিবেচনা করা হবে জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট (থাকলে) বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সনদ দেখে। বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিট গ্রহণযোগ্য হবে না। বয়সের ক্ষেত্রে মিথ্যা সনদ প্রমাণিত হলে মিথ্যা সনদ প্রদানকারীরও দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হবে। বাল্যবিবাহের আয়োজনে সহায়তাকারী বিবাহ রেজিস্ট্রারের নিবন্ধন বাতিল করা হবে এবং সেই ব্যক্তিকেও একই রকম সাজা ও জরিমানা করা হবে। বিয়ের তথ্য সংরক্ষণের জন্য আধুনিক তথ্যভান্ডার করা হবে।