ই তথ্য সেবাকেন্দ্র
উন্নতির পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও হতে পারবেন কর্মদক্ষ ডিজিটাল কারিগর
প্রকাশিত হয়েছে : ২ অক্টোবর ২০১৪, ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ
মহ্সীন মুরাদ ::
ই তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে এলাকার সাধারণ জনগণ। বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা লাভের পাশাপাশি এতে লাভমান হচ্ছেন তারা। বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে ২ টাকা খরচের একটা ফটোস্টের জন্য লোকজন ৫০ টাকা খরচ করে শহরে যেতে হয়। বর্তমানে প্রতিটা ইউনিয়নে ই-তথ্য সেবাকেন্দ্র চালু হওয়ায় খরচটাও যেমন কম হচ্ছে তেমনি সময়কে বাঁচিয়ে অন্য কাজে শ্রম দিতে পারছেন লোকেরা। এদিকে ই তথ্য সেবার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা মাসে ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন বলে সাক্ষাতে উপজেলার কয়েক ইউনিয়নের উদ্যোক্তারা জানান। তবে অনেক ইউনিয়নে জিনিসপত্র বিকল থাকায় এ থেকে জনসাধারণ যতটা সেবা পাওয়ার কথা ছিল ঠিক ততটা পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
সদর উপজেলার আমতৈল, কাগাবলা, চাঁদনীঘাট একাটুনা ইউনিয়ন ঘুরে জানা যায়, ইউনিয়নের প্রায় হাট-বাজারে বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। এ জন্য বাজারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে হরেক রকমের দোকান। তার মাঝে ফোন ফ্যাক্স, ফটোস্টেট, স্ক্যানিং, লেমোনেটিং, বিদেশে স্কাইপির মাধ্যমে কথা বলা, ছবি তোলাসহ গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দোকান কিংবা স্টুডিও। এখান থেকে একটু ছড়া মূল্যে সুবিধা নিতে হয় তাদের। ইউনিয়নে ই তথ্য সেবাকেন্দ্রে এসকল সেবা নিতে অল্প খরচ হওয়ায় ইউনিয়নমুখী হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। দিনদিন বাড়ছে ই তথ্যকেন্দ্রের গ্রাহক সংখ্যা। এতে জনসাধারণ যেমন লাভমান হচ্ছে তেমনি জনপ্রিয়তা অর্জন করছে ই-তথ্য সেবা কেন্দ্র। অন্যদিকে বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা গেছে ই-তথ্য সেবার জন্য দেয়া জিনিসপত্রের মধ্যে বেশিরভাগ ই বিকল অবস্থায় পরে আছে। এ থেকে জনসাধারণ যতটা সেবা পাওয়ার কথা ছিল ঠিক ততটা পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বুদ্ধামহল। তাছাড়া উদ্যোক্তার নির্দিষ্ট কোন বেতন ভাতা না থাকায় কাজে মনোযোগী নয় তারা, এমন অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। সকল সমস্যা সমাধান করা হলে ই তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে আয় উন্নতির পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও হতে পারবেন কর্মদ ডিজিটাল কারিগর। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে সমাজকে একটু হলে গুচানো সম্ভব হবে। তখন সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ।
ই-তথ্য সেবা থেকে মূলত কম্পিউটার কম্পোজ, ই-মেইল, জন্মনিবন্ধন, ছবি তোলা, কম্পিউটার প্রশিণ, বিভিন্ন সরকারি ফরম সরবরাহ, জমির খতিয়ানের জন্য আবেদন ও সরবরাহ, ফটোকপি, কৃষি তথ্য, শিা তথ্য, চিকিৎসা তথ্য প্রদান, সরকারিভাবে প্রবাস যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি সেবা দেওয়া হয়। এখানে, সাধারণ কম্পোজের জন্য ২০ থেকে ২৫ টাকা, ফটোস্টেট প্রতি কপি ১ টাকা, ফটোপ্রিন্ট ৫ টাকা ও ইলেক্ট্রনিক্স মেইল ১০ থেকে ২০ টাকা, অনলাইন ফরম ফিলাপ ৩০ থেকে ৪০ টাকা নেয়া হয়।
তুলনামূলকভাবে বাইরের দোকান থেকে ইউনিয়ন পরিষদের ই-তথ্য সেবায় কম খরচ হয় বলে দিনদিন বেড়েই চলছে গ্রাহকের পরিমাণ। তবে অনেক ইউনিয়নের ই তথ্য সেবা কেন্দ্রের কম্পিউটার, স্ক্যানার, লেজার প্রিন্টারসহ বেশিরভাগ জিনিসপত্র বিকল। এ জন্য সঠিকভাবে জনসাধারণের মাঝে সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিছুদিনের মধ্যেই তা সমাধান করে আবারও পুরোপুরিভাবে সব রকমের সেবা দেয়া হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
ই সেবার উদ্যোক্তা গালিম মিয়া জানান, ‘মোটামুটি রুজি ভাল হয়। তবে মেশিনগুলো পুরোপুরি ঠিক হলে আরো বেশি সেবাও দিতে পারবো, আয়ও আরো বেশি হবে’।
জন্ম নিবন্ধনের কার্ড নিতে ইউনিয়নের মাসকান্দি এলাকার ফয়সল আহমদ, আটগাওয়ের সেলিনা বেগম, পংধরাইয়ের সুলতানা বেগম জানান, ই তথ্য সেবা থেকে তারা অনেক ধরণের সুবিধা পাচ্ছেন। গ্রাম এলাকায় এরকম একটা সুযোগ থাকায় তারা সহজেই ফটোস্টেট করা যায়। আর না হলে সামান্য ২ টাকার কাজের জন্য আরো ৫০ টাকা খরচ করে শহরে যেতে হতো।
ইউনিয়নের ই তথ্য সেবায় ভার্সিটি ভর্তি ফরম পূরণ করতে আসা আসা রায়হান আহমদ জানান, ভর্তি ফরম বাইরেও পূরণ করা যায়, আমাদের কলেজের সামনে হয় কয়েকটা দোকানে এসব কাজ করে থাকি কিন্তু সেখানে অনেণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এবং খরচ এখানের তুলনায় অনেক বেশি। এ জন্য আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফরম পূরণ করে নিচ্ছি।
আমতৈল ইউনিয়ন সচিব আব্দুল করিম জানান, আমাদের ইউনিয়নে গ্রাহকের সংখ্যা অনেক রয়েছে। ই তথ্য- সেবায় প্রতিদিন শতাধিক লোক ভিড় জমান। বর্তমানে আমাদের ফটোস্টেট মিশিন আর লেজার প্রিন্টার একটু বিকল থাকায় প্রিন্টের সেবা দিতে পারছি না তবে খুব শীঘ্রই তা সমাধান হবে।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুজিত দাশ জানান, পূর্বের উদ্যোক্তা চলে ইউনিয়নের বাইরে আরেকটি দোকান খুলেছেন। বর্তমানে নতুন আরেকজনকে উদ্যোক্তা হিসেবে মৌখিক নিয়োগ দিলেও তিনি ততটা পারদর্শি নন। পারদর্শি হওয়ার জন্য ই তথ্যসেবা থেকে আমাদের তেমন আয় হচ্ছে না। এ জন্য আলোচনা সাপেে ইউনিয়নের তহবীল হতে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে দেয়া হয়।
মাসে কত টাকা আয় করতে পারে একজন উদ্যোক্তা এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ই তথ্য সেবা কেন্দ্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা অসম্ভব কিছু নয় যদি সে হিসেবে গ্রাহক থাকে। আমাদের ইউনিয়নে কিছু জিনিস বিকল ছিল সেগুলো আমরা মেরামত করে নিয়েছি। এখন থেকে জনসাধারণ খুবই অল্প মূল্যে ডিজিটাল সেবা নিতে পারছেন।
একাটুনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু ছুফিয়ান বলেন, ই-তথ্য সেবা সরকারের একটা যুগান্তকারি পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে গ্রাম-এলাকায় অতি অল্প খরচে ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। এর মধ্য দিয়ে আমাদের আগামীর প্রজন্ম আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে পারবে বলে আমার ধারনা করা যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম খান, বিভিন্ন ইউনিয়নে যে তথ্য সেবাগুলো আছে সে গুলো খুব ভালভাবেই চলছে। তথ্যসেবাগুলোতে আমরা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ফটোকপি, স্কেনার, ছবি তোলা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। উইনিয়ন উদ্যোক্তাদের বেতন না থাকার কারণে তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে জনসাধারণ সেবা পাচ্ছেন না এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, এজন্য তাদের বেতন নাই কারণ তাদেরকে আমরা কম্পিউটার, প্রিন্টার, লেমোনেটিং মেশিন, ফটোস্টেট মেশিনসহ প্রাসঙ্গিক যা লাগে সব ধরণের জিনিস তাদের পুজি হিসেবে দেয়া হয়েছে যেন এ থেকে তারা আয় করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং ইউনিয়নের জনসাধারণকে সেবা দিতে পারে। এখান থেকে কোন অংশ ইউনিয়নের নেই। শুধু উদ্যোক্তাই পাবে।