এমএলএম কোম্পানিকে লাইসেন্স দিচ্ছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
উচ্চ আদালতে যাচ্ছে ১৭টি কোম্পানি
প্রকাশিত হয়েছে : ২ অক্টোবর ২০১৪, ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) কোম্পানি লাইসেন্স ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে। চলতি মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের আবেদন নাকচ করে দেয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছে ফরএভার লিভিং প্রডাক্ট বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আরো ১৬টি কোম্পানি চলতি মাসের মধ্যে আদালতে যাবে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয়ে (রেজসকো) আবেদন করে লাইসেন্স না পেয়ে ১৭টি কোম্পানি চলতি বছরের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড, এইমওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, মিশন ১০ লিমিটেড, লাইফওয়ে (বিডি), ফরএভার লিভিং, টিয়ানসি (বিডি), এবি নিউট্রিক ইন্টারন্যাশনাল, এসএমএন গ্লোবাল, অ্যাডভান্স বাংলা, দেশান (বিডি), ডি ক্ল্যাসিক লাইফ (বিডি), ড্রিম টুগেদার, সানুস লাইফ (বিডি), লাইফওয়ে (বিডি), ম্যাকনম ইন্টারন্যাশনাল ও ভিনশন ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডি) লিমিটেড অন্যতম।
এসব কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে লাইসেন্স বিষয়ে শুনানি সম্পন্ন করে। অবশেষে গত আগস্টে কোনো কোম্পানিকেই লাইসেন্স না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত মাসে ১০টি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হবে না জানিয়ে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাকি সাতটি কোম্পানিকেও পরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এক-দুইদিনের মধ্যে তারা তা পেয়ে যাবে বলে নিশ্চিত করেছে মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, মন্ত্রণালয় এ মুহূর্তে এমএলএম কোম্পানির লাইসেন্স না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন অনুযায়ী তারা আদালতে যেতে পারে। আদালত কোনো কোম্পানির পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলে ওই কোম্পানি লাইসেন্স পাবে।
এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন নাকচ হওয়ার পর হাইকোর্টে রিট করেছে ফরএভার লিভিং প্রডাক্ট বাংলাদেশ লিমিটেড। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি সেলস ম্যানেজার এম বদরুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালত মন্ত্রণালয়কে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে আইনবিরোধী বলে মনে করছেন এমএলএম কোম্পানির উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, সরকার এমএলএম কোম্পানির জন্য আইন করেছে, বিধিমালা করেছে। কিন্তু এখন লাইসেন্স দিচ্ছে না। সরকার লাইসেন্স না দিলে ভুয়া কোম্পানিগুলোর প্রতারণা বাড়বে। লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করবে অনেকে। বিশেষ করে অনলাইনে প্রতারণা বাড়বে।
এ বিষয়ে ম্যাকনম ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফখরুদ্দিন আসিফ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুবিচার করেনি। তারা গণহারে সবাইকে না বলেছে। তিনি এখনো চিঠি পাননি। চিঠি পাওয়ার পর আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিতে হবে।
ডেসটিনির পক্ষ থেকে কোম্পানির সচিব মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার এমএলএম আইন পাস করেছে। এ আইন অনুযায়ী সরকার লাইসেন্স দেবে। মন্ত্রণালয় তাদের আবেদন মঞ্জুর করেনি। তারা এখন আদালতে যাবেন। প্রায় একই মন্তব্য করেন ড্রিম টুগেদার প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাঈন উদ্দিন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছর ২১টি কোম্পানির আবেদনের বিপরীতে চারটি এমএলএম কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয় রেজসকো। এগুলো হলো— ওয়ার্ল্ড ভিশন ২১, স্বাধীন অনলাইন পাবলিক লিমিটেড, রিচ বিজনেস সিস্টেম ও এমএক্সএন মডার্ন হারবাল ফুড। পাশাপাশি ডেসটিনিসহ ১৭টি কোম্পানির আবেদন নামঞ্জুর করে তারা।
উল্লেখ্য, এমএলএম কোম্পানি বিধিমালা অনুযায়ী তাদের লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ রেজসকো। তারা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। মন্ত্রণালয় লাইসেন্স দিতে রাজি না হলে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা যাবে।