ঈদের পূর্ব মুহূর্তে জমে ওঠার আশা ব্যবসায়ীদের
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ
সিলেট সংবাদদাতা ::
সিলেট নগরীর একমাত্র বৈধ পশুর হাট কাজীর বাজারে কোরবানির পশুর বিক্রি এখনও জমে উঠেনি। বাজারে গরুর পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও সেই অনুপাতে নেই বিক্রি। তবে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে ক্রেতাদের সমাগম বাড়লে জমজমাট হয়ে উঠবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই পশুর হাট, এমনটিই আশা ব্যবসায়ীদের।
২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা সমাগম থাকলেও গরু বিক্রির সংখ্যা খুবই কম। বাজারে ক্রেতারা আসছেন, তবে দেখে চলে যাচ্ছেন। এছাড়া এবার কোরবানির গরুর দাম অন্যবারের তুলনায় প্রচণ্ড চড়া বলেও জানিয়েছেন ক্রেতারা।
গরু কিনতে আসা নগরীর মিরাবাজার এলাকার ফাহিম আহমদ পূর্বদিককে বলেন, গরু দেখতে এসেছি। আগে কিনলে গরু রাখবো কোথায়? তাই গরু দেখেই চলে যাচ্ছি। ঈদের দু’য়েক দিন আগেই গরু কিনে নিয়ে যাবো। তাছাড়া এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি হাঁকা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, সব গরুই এবার অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি দামে কেনা। ফলে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। অবশ্য বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি, গরু আসতে রাস্তায় কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করলে বাজার শিথিল থাকবে। আর বাজার শিথিল থাকলে দামও কমবে।
সোমবার রাতে পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু নিয়ে কাজির বাজারের এই হাটে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব গরুর মধ্যে দেশীয় ছোট, ভারতীয় ও নেপালি গরুও রয়েছে। এসব গরুর দাম সর্বনিম্ন ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে। শুধু গরুই নয়, উঠেছে ছাগল, ভেড়াও।
সিলেটের মোগলাবাজার থেকে প্রথম দফায় ২১টি ভারতীয় গরু নিয়ে এসেছেন হানিফ। দ্বিতীয় দফায় তিনি আরো ৩০টি গরু হাটে নিয়ে আসবেন বলেন জানিয়েছেন। তার এখানে আড়াই লাখ টাকা দামের গরু আছে। তবে সত্তর হাজার টাকার নিচে কোনো গরু নেই।
কুমিল্লা থেকে ২৯টি দেশী প্রজাতির গরু নিয়ে এসেছেন রোমন আহমদ। তিনি পূর্বদিককে বলেন, ‘শনিবার থেকে হাটে গরু তুলেছি; কিন্তু ক্রেতাদের তেমন সাড়া পাচ্ছি না। তবে শেষের দিকে ক্রেতাদের সমাগম হলে তার সবকটি গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।’
আরেক গরু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা হয় পূর্বদিকের। দুই দিনে তার ৮টি গরু বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি কুষ্টিয়া থেকে ২৬টি গরু নিয়ে এসেছি। আশা করি বাকি গরুগুলো বিক্রি হয়ে যাবে। বিক্রি হওয়া গরু গুলোর মূল্য ৪৫ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা ছিলো বলে জানান তিনি।
গরু বিক্রি কম হওয়া প্রসঙ্গে শাহীন উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, এই হাটের বেশির ভাগ ক্রেতাই শহরের। আর ঈদের এখনও সপ্তাহ দিন বাকি। শহরের বেশিরভাগ ক্রেতারাই গরু বেশি দিন আগে ক্রয় করে গরুর রাখার জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়েন, ফলে ঈদের দু’য়েকদিন আগেই তারা গরু কিনতে আসেন। তাই ঈদের পূর্ব মুহূর্তে সিলেটের পশুর হাট জমে উঠবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে গরু কিনে অনেক ক্রেতাকেই খুশি মনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। রাত ১১টায় তালতলা পয়েন্টে দেখা হয় শহরতলীর বালুচর এলাকা রোম্মান আহমদের সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘক্ষণ ঘোরাঘুরি শেষে ৫৮ হাজার টাকায় গরুটি কিনেছেন। ঈদের নিকটবর্তী সময়ে বাজারে ভীড় বেশি থাকবে, তাই তিনি আগেভাগেই গরু কিনতে এসেছিলেন।
অন্যদিকে পশুর হাটে আগত বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তায় নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি পুরো হাট এলাকাকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এসেছে হাট কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া জাল নোট শনাক্তকরণে মেশিন ও কৃত্রিমভাবে মোটাতাজাকৃত গরু পরীক্ষা করার জন্য বিশেষ মেডিকেল টিম রয়েছে। পূর্বদিককে এসব তথ্য জানান, কাজির বাজারের গরুর হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লুলন।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় গরুর হাট বসানো হলেও সোমবার পর্যন্ত কোথাও কোরবানির পশুর হাট পুরোপুরি শুরু হয়নি।
নগরীতে সিসিকের কোন নিজস্ব মাঠ না থাকায় ঐতিহ্যবাহী কাজিরবাজার পশুর হাট ছাড়া অন্য কোথাও অস্থায়ী পশুর হাট বসতে দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে সিসিকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছিলো।
এদিকে সিলেট সদর উপজেলায় ৫টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। হাটগুলো হচ্ছে- পীরেরবাজার এভারগ্রিন মাঠ, মিরাপাড়ার আবদুল লতিফ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ, সুরমা গেটের বাইপাস পয়েন্ট, টুকেরবাজার ইউনিয়নের সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখী ও লাক্কাতুরা মাঠ। এই হাটগুলোতে পশু বিক্রি পুরোপুরি শুরু হয়নি। তবে মঙ্গলবার থেকে এসব হাটের পশু বিক্রি পুরোপুরি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।