ইরাক ও সিরিয়া অভিযানে আমেরিকার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে ধূম্রজাল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ
ইরাকে মার্কিন সেনা পাঠানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়াতেও মার্কিন বাহিনীর স্থলসেনার অভিযান শুরু করার আলামত ক্রমেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইরাক ও সিরিয়া উভয় দেশে স্থল বাহিনীর অভিযানের আশঙ্কার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে নতুন করে মার্কিন আগ্রাসনের আভাসও স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ইরাকে মার্কিন সেনা পাঠানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ সিরিয়াতেও মার্কিন বাহিনীর স্থলসেনার অভিযান শুরু করার আলামত ক্রমেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইরাক ও সিরিয়া উভয় দেশে স্থল বাহিনীর অভিযানের আশঙ্কার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে নতুন করে মার্কিন আগ্রাসনের আভাসও স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা। এর আগে প্রধানত রাশিয়া ও চীনের বিরোধিতার কারণে সিরিয়ায় হামলা চালানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার সিরিয়ায় আগ্রাসী হামলা চালানোর ক্ষেত্রে নতুন অজুহাত তৈরি করে দিয়েছে আইএস জেহাদিরা। অনেকেই মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেই আইএসকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে এই অজুহাত সৃষ্টি করেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন জানিয়েছে, তারা নতুন করে ৫০০ সেনা মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাবে এবং শুধু ইরাকেই অন্তত ২০০ সেনা এবং বাদবাকি সেনাদেরকে অন্যান্য আরব দেশে মোতায়েন করা হবে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ে ১৩৮ সেনাকে রাজধানী বাগদাদে, ৬৮ সেনাকে আরবিলে এবং ১০ জন সেনাকে ইরাকের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হবে। ইরাকে নতুন করে যে ২০০ মার্কিন সেনা পাঠানো হবে তা এর আগে পাঠানো ৪৭৫ সংখ্যক বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হবে। আইএস গত গ্রীষ্মে ইরাকে তৎপরতা শুরু করার পর এবং বেশ কিছু জায়গা দখল করে নেয়ার পর নতুন করে ইরাকে মার্কিন সামরিক তৎপরতা শুরু হয়। ইরাকে নিরাপত্তা রক্ষা এবং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার জন্য বর্তমানে ১০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া ইরাকের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও মার্কিন দূতাবাস রক্ষা এবং ইরাক সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দেয়াও ছিল সেদেশে মার্কিন সেনা মোতায়েনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
অপর এক খবরে বলা হয়, মার্কিন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে, যৌথ বাহিনীর হামলায় সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জেহাদিদের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে, তবে শুধুমাত্র বিমান হামলা চালিয়ে তাদের দমন করা সম্ভব নয়। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মার্টিন ডিম্পসে বলেছেন, সিরিয়া আর ইরাক, উভয়ক্ষেত্রেই ভূমিতে সামরিক অভিযান চালানো জরুরি হয়ে পড়েছে। এজন্য রাজনৈতিক সমাধানের ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন এই সামরিক কর্মকর্তা। গত শুক্রবার ইরাকে বিমান হামলায় অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির হাউজ অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে রাশিয়া হুঁশিয়ারি জানিয়েছে যে, সিরিয়ায় আমেরিকা আর আরব দেশগুলোর বোমা হামলার অর্থ হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সিরিয়ায় যেকোনো হামলা চালানোর আগে, দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সম্মতি নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকে সন্দেহজনক আইএস জেহাদি গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটায় তাদের মোকাবেলার অজুহাতে নতুন করে ইরাকে সেনা প্রেরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তারা এ যাবত বলে আসছেন তাদের সেনারা জেহাদিদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানে অংশ নেবে না। কিন্তু ১৯৬০’র দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, প্রথমে সামরিক পরামর্শ বা উপদেষ্টা হিসেবে সেখানে মার্কিন সেনা পাঠানো হলেও বহু বছর ধরে সেখানে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ধারণা আন্তর্জাতিক জোট গঠন, বিমান হামলা ও ইরাকিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে আইএস গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ কারণে আমেরিকা গত কয়েক সপ্তাহে ইরাকে প্রায় দেড় হাজার সেনা পাঠিয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ওয়াশিংটন ও বাগদাদের মধ্যকার নিরাপত্তা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং বর্তমানে সেদেশে প্রায় ১২ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এ অবস্থায় আইএস জেহাদিদের ওপর বিমান হামলা এবং ইরাকি সেনাবাহিনীর অভিযানে যদি জেহাদিদের নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে ইরাকে আরো বেশি সংখ্যক মার্কিন সেনা পাঠানোর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে সেটাই এখন সবার প্রশ্ন।
২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর বেশ অনেক বছর সেদেশে মার্কিন সেনা উপস্থিতি বজায় ছিল এবং এরপর সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি ইরাকে নতুন করে সেনা পাঠানো শুরু করেছে। আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা উপস্থিতির ভবিষ্যৎ কি হবে তা এখনো স্পষ্ট না হলেও আমেরিকা ফের ইরাকে যুদ্ধের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রচারকালে মার্কিন জনগণের যুদ্ধবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন।