মোটিভ নিশ্চিত গোয়েন্দারা খুনিরা নাগালের বাইরে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ
চ্যানেল আইয়ের ইসলামী অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের পর এক মাসেও জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি ডিবি। অবশ্য হত্যার মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
চ্যানেল আইয়ের ইসলামী অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের পর এক মাসেও জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি ডিবি। অবশ্য হত্যার মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা বলছেন, ধর্মীয় মতাদর্শের বিরোধেই ফারুকীকে খুন করে উগ্রপন্থিরা। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি সদস্যদের একটি ইউনিট এ ঘটনা ঘটায়। তাদের ‘মোটামুটি’ শনাক্ত করা গেলেও এখনও এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি গোয়েন্দারা। এদিকে তদন্তের ‘ধীরগতি’তে হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা।
গত ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ১৭৪ নম্বর বাসার দোতলায় ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের মামলাটি পরে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। থানা পুলিশ ও ডিবি সন্দেহভাজন হিসেবে এক নারীসহ তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য মেলেনি।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সম্পৃক্ততার সন্দেহ শুরু থেকেই ছিল। তদন্তে ব্যবসায়িক ও পারিবারিক বিরোধসহ অন্যান্য বিষয়ও খতিয়ে দেখা হয়েছে। ইন্টারনেটে ফারুকীর বিরুদ্ধে একটি পক্ষ প্রচারণা চালিয়েছে। অবশেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ধর্মীয় মতবাদের কারণেই তাকে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর এটা মোটামুটি নিশ্চিত, জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহে গ্রেফতার জেএমবির সাত, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই ও হরকাতুল জিহাদের তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তারা সরাসরি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করলেও বিষয়টি সম্পর্কে তারা জানত। তারা বলেছে, টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ফারুকীর বক্তব্যের কারণে মানুষ মাজার ও শিরকের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল বলে বিশ্বাস করত জঙ্গিদের একটি গ্রুপ। মূলত এ কারণেই তাকে হত্যা করা হতে পারে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গোপীবাগে কথিত পীর লুৎফর রহমানসহ ছয় খুন ও ফারুকীকে খুনের ঘটনায় অনেক মিল রয়েছে। দুটি ক্ষেত্রেই বাসায় ঢোকা, হাত-পা বাঁধা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কাটার ধরনে সাদৃশ্য রয়েছে। শুধু লুৎফরের গলার পেছন থেকে এবং ফারুকীর সামনে থেকে কাটা হয়েছে। এসব থেকে ধারণা করা হচ্ছে, দুই ঘটনায় একই মতাদর্শে বিশ্বাসী উগ্রপন্থি জঙ্গিরা জড়িত। তদন্ত অনেকটা এগিয়েছে, খুব অল্পদিনের মধ্যে ফারুকী হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, কৌশলগত কারণে জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এখন একসঙ্গে কাজ করছে। মতাদর্শের দিক থেকে তারা এমনিতেই কাছাকাছি ছিল। এখন তারা এক ছাতার নিচে থেকেই নানা কার্যক্রম
চালাচ্ছে। এই যৌথ জঙ্গিগোষ্ঠীর মধ্যে ছোট ছোট দল রয়েছে। তাদের কোনো একটি দল বা ইউনিট ফারুকীকে হত্যা করে।এদিকে নিহতের ছেলে ফয়সাল ফারুকী বলেন, ‘তদন্তের ধীরগতিতে আমরা হতাশ। এক মাস পরও আমার বাবার খুনিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি রয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। ডিবি পুলিশ বলছে, জঙ্গিরা হত্যায় জড়িত। এর সঙ্গে আমরা একমত। শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি, ধর্মীয় উগ্রপন্থী জঙ্গিরা এতে জড়িত থাকতে পারে। কারণ ওই ঘটনার আগেও তাকে অনেকবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন ফারুকী। হত্যার পরপরই তার রাজনৈতিক সহকর্মী ও স্বজনরা অভিযোগ করেন, জামায়াত-হেফাজত গোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনার আগে টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপকদের এক বৈঠকে তার বিরুদ্ধে নানা আলোচনা হয় বলেও দাবি করা হয়। এরপর ছয় উপস্থাপকের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করে ইসলামী ফ্রন্টের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসেনা। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন জামায়াতের রুকন, এনটিভি ও এটিএন বাংলার ইসলামী অনুষ্ঠানের আলোচক তারেক মনোয়ার, ওই দুটি চ্যানেলের অনুষ্ঠানের আলোচক ও নরসিংদী জেলা জামায়াতের সাবেক আমির কামাল উদ্দিন জাফরী, দিগন্ত ও পিস টিভির অনুষ্ঠানের আলোচক কাজী ইব্রাহিম, এনটিভির অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আরকানুল্লাহ হারুনী, আরটিভি ও রেডিও টুডের উপস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ বখশী এবং বাংলাভিশনের উপস্থাপক মুখতার আহমদ।