শেয়ার বাজার
৫ হাজার পয়েন্টের সীমানায় ডিএসইর প্রধান সূচক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৫ হাজার পয়েন্টের কাছে পৌঁছেছে। এদিন লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স দাঁড়ায় ৪৯৬৭ পয়েন্টে। টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় কয়েক দিন ধরে এ সূচক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক ::
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৫ হাজার পয়েন্টের কাছে পৌঁছেছে। এদিন লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স দাঁড়ায় ৪৯৬৭ পয়েন্টে। টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় কয়েক দিন ধরে এ সূচক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে শেয়ার কেনাবেচায় গুজবে কান না দিতে বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত বছরের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়ার পর ডিএসইএক্স গতকালই প্রথমবারের মতো ৫ হাজার পয়েন্ট ছাড়ায়। যদিও দিন শেষে এ সূচক কিছুটা কমে। আর ডিএসইর আগের সাধারণ সূচক বিবেচনায় নেয়া হলে ২০১২ সালের ২১ মের পর প্রথমবারের মতো কোনো সূচক ৫ হাজার পয়েন্ট ছুঁয়েছে। এ হিসাবে প্রায় দুই বছর তিন মাস পর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক এ অবস্থানে উঠল।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল বড় উত্থান দিয়েই ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম ৫ মিনিটে সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৯ পয়েন্ট বাড়ে। বেলা সাড়ে ১১টায় সূচক দাঁড়ায় ৪৯৭০ পয়েন্টে। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ডিএসইএক্স ৫০১০ পয়েন্টে উন্নীত হয়। এর পর কিছুটা নিম্নগামী হয়। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে সূচক নেমে আসে ৪৯৮০ পয়েন্টে, যা দিন শেষে দাঁড়ায় ৪৯৬৭ পয়েন্টে।
গতকাল সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় মূল ভূমিকা ছিল ব্যাংকিং খাতের। এদিন এ খাতের বাজার মূলধন বাড়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। পাশাপাশি খাতটিতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় (১৭৪ কোটি টাকা)। এছাড়া বাজার মূলধন বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল সিরামিক খাত ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, সাধারণ বীমা ৩ দশমিক ৩ ও প্রকৌশল খাতের ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে দর সংশোধন হয় টেলিযোগাযোগ, ওষুধ ও জীবন বীমা খাতে।
এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে চাঙ্গাভাব এসেছে। গতকাল বিএসইসির নিয়মিত কমিশন সভায় আলোচ্যসূচির বাইরে সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভা শেষে বাজার স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়। আর বিনিয়োগকারীদের কোনো গুজবে কান না দিয়ে মৌলভিত্তি বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়া হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিএসইর তথ্যানুসারে কয়েক মাস ধরে নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে বিদেশী বিনিয়োগ। আর চলতি মাসে বিদেশী বিনিয়োগ অনেকটাই কমেছে। তবে দেশীয় সব শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে সূচকে নিয়মিত বাড়তি পয়েন্ট যোগ হচ্ছে।
বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস সূত্রে জানা যায়, মার্জিন ঋণের বড় একটি অংশ আটকে যাওয়ায় নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সংকুচিত করছে। এ অবস্থায় নেটিং ছাড়া শেয়ার লেনদেন করার ক্ষমতা অধিকাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর নেই।
প্রতিদিনের লেনদেনের বড় অর্ধেকের বেশি আসছে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে। যদিও এর সবই সম্পন্ন হয়েছে নেটিংয়ের মাধ্যমে। আর লেনদেনে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ করছে ব্যক্তিশ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীরা। ঈদুল ফিতরের পর থেকেই মূলত এসব বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এসব বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে বড় মূলধনি কিছু শেয়ারে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, বেক্সিমকো, বেক্সিমকো ফার্মা, এসিআই লিমিটেড, এসিআই ফর্মুলেশনস, এমজেএল বিডি, গ্রামীণফোনসহ শীর্ষস্থানীয় মূলধনি শেয়ারগুলোয় ব্যক্তিশ্রেণীর ওই সব বিনিয়োগকারীর মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। সম্প্রতি এসব শেয়ারের লেনদেন ও দরবৃদ্ধির চিত্রেও তা প্রতিফলিত হচ্ছে। শেয়ারবাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বগতিতে এসব কোম্পানিই নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সায়ীদ বলেন, ‘বাজার চাঙ্গা থাকুক এটা সবাই চায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চাঙ্গা বাজারে কিছু কোম্পানি বিনিয়োগ অনুকূলে না থকলেও সংশ্লিষ্ট শেয়ারের দরে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এ কারণে বর্তমান বাজারের পিই রেশিও অনেক বেড়েছে। এটি বাজারের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এমন বাজার চিত্রে ফান্ড ব্যবস্থাপক হিসেবে আমরা অস্বস্তি বোধ করি।’
ডিএসইতে গতকাল ৩০১টি কোম্পানির মোট ২৭ কোটি ৫১ লাখ ১৮ হাজার ১৫৬টি সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়। লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের বাজারদর ছিল ১ হাজার ১৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেশি।
ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের ৪২.৫৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪৯৬৭.১১ পয়েন্টে, ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ২.৪৬ পয়েন্ট বেড়ে ১৮৯১.৭১ পয়েন্ট এবং ডিএসইএক্স শরিয়াহ সূচক ১.৮৩ পয়েন্ট কমে ১১৪৭.৭৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দর বাড়ে ১৫২টির, কমে ১৪০টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৯টির।
দেশের অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল ২৩৩টি কোম্পানির মোট ২ কোটি ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫৯টি সিকিউরিটিজের লেনদেন হয়; যার বাজারদর ছিল ৭৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দর বাড়ে ১২৪টির, কমে ৯৬টির ও অপরিবর্তিত ছিল ১৩টির। সিএসইতে গতকাল সার্বিক সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৫৬ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৪২৬ দশমিক ২৮ পয়েন্টে। অন্যদিকে নির্বাচিত সূচক সিএসই-৩০ আগের দিনের চেয়ে ৯৭ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩৭৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাজিদ হোসেন বলেন, ‘বিন্যস্তকরণের পর স্টক এক্সচেঞ্জের রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন আলাদা হয়েছে। ফলে লেনদেন ব্যবস্থার নজরদারি ও তদারকি বেড়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরছে, যা বর্তমান বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকে সুদের হার কমে যাওয়া ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাজার চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখছে।’
এদিকে গতকাল টাকার ভিত্তিতে ডিএসইতে বেশি লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলো হলো— এমজেএল বিডি, বিএসআরএম স্টিলস, বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, ইউসিবিএল, গ্রামীণফোন, আরএসআরএম স্টিল, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, পদ্মা অয়েল ও আরএকে সিরামিকস।
ডিএসইতে বেশি দরবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলো হলো— বিডি ফিন্যান্স, আরএকে সিরামিকস, আইএফআইসি, সিনোবাংলা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, শাহ্জালাল ব্যাংক, এনবিএল, এমজেএল বিডি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স।
অন্যদিকে বেশি শেয়ারদর হারানো কোম্পানিগুলো হলো— আলহাজ টেক্সটাইল, তুং হাই নিটিং, সুহূদ টেক্সটাইল, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফার কেমিক্যাল, দেশ গার্মেন্টস, সাফকো স্পিনিংস, বিডি বিল্ডিং, ফার ইস্ট নিটিং ও বিআইএফসি।