গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার
হাইকোর্টের নির্দেশনা মানছে না ওরিয়ন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৮:২১ পূর্বাহ্ণ
গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে আদায় করা বাড়তি টোলের হিসাব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) বুঝিয়ে দিচ্ছে না ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। যদিও ফ্লাইওভার সম্পর্কিত এক মামলার রায়ে গত ৮ জুন এ-সংক্রান্ত আদেশ দেন হাইকোর্ট।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে আদায় করা বাড়তি টোলের হিসাব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) বুঝিয়ে দিচ্ছে না ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। যদিও ফ্লাইওভার সম্পর্কিত এক মামলার রায়ে গত ৮ জুন এ-সংক্রান্ত আদেশ দেন হাইকোর্ট। গত সাড়ে তিন মাসেও আদালতের নির্দেশনা মানা হয়নি। এজন্য গত সপ্তাহে ওরিয়নকে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি।
চুক্তি ভঙ্গ করে উদ্বোধনের দিন থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ৭০-১০০ শতাংশ বাড়তি টোল আদায় করছে ওরিয়ন। এছাড়া টোলের হার বাড়ানোর আগে ডিএসসিসির অনুমোদনও নেয়া হয়নি। এজন্য গত বছরের অক্টোবরে বাড়তি টোল আদায় বন্ধে ওরিয়নকে সতর্ক করে দুই দফা চিঠি দেয় ডিএসসিসি। অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে ডিএসসিসি যাতে কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারে, সেজন্য গত বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে মামলা করে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
মামলার রায়ে বলা হয়, আদায়কৃত বাড়তি টোলের হিসাব ডিএসসিসিকে দিতে হবে। ফ্লাইওভার থেকে টোল বাবদ আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে থাকবে। স্বচ্ছতার জন্য ব্যাংক হিসাবটি ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পাশাপাশি ফ্লাইওভার নিয়ে আরবিট্রেশনের চলা মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, হাইকোর্টের রায়ের সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ফ্লাইওভারের অতিরিক্ত টোলের হিসাব বুঝিয়ে দেয়নি ওরিয়ন। তবে রায়ের কপি না পাওয়ায় এত দিন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি ডিএসসিসি। তবে সম্প্রতি রায়ের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহের পর ওরিয়নকে চিঠি দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনছার আলী খান বলেন, হাইকোর্টের রায়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও অতিরিক্ত টোলের কোনো হিসাব বুঝিয়ে দেয়নি ওরিয়ন। এজন্য গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণে ২০০৫ সালে চুক্তি সই করে তত্কালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ওরিয়ন। চুক্তি অনুযায়ী, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেলের টোল হওয়ার কথা ৫ টাকা, অটোরিকশা ১০, কার ৩৫, জিপ ৪০, মাইক্রোবাস ৫০, পিকআপ ৭৫, মিনিবাস ও চার চাকার ট্রাক ১০০, বাস ও ছয় চাকার ট্রাক ১৫০ এবং ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান ২০০ টাকা। তবে উদ্বোধনের পরদিন (১২ অক্টোবর) থেকেই এক্ষেত্রে মোটরসাইকেলে ১০ টাকা, অটোরিকশা ১৮, কার ৬০, জিপ ৭০, মাইক্রোবাস ৮৫, পিকআপ ১৩০, মিনিবাস ও চার চাকার ট্রাক ১৭৩, বাস ও ছয় চাকার ট্রাক ২৬০ এবং ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান থেকে ৩৪৫ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে।
চুক্তিতে আরো বলা হয়, ফ্লাইওভারে টোলের হার নির্ধারণ করবে সিটি করপোরেশন। তিন বছর পর পর টোলের হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু তা মানছে না ওরিয়ন। উল্টো টোলের হার আরো বাড়াতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এতে ডিএসসিসি রাজি না হওয়ায় গত অক্টোবরে আরবিট্রেশনে মামলা করে ওরিয়ন, যা এখনো চলমান।
সম্প্রতি আরবিট্রেশন মামলায় নিজেদের জবাব দাখিল করে ডিএসসিসি। এতে যুক্তি দেখানো হয়, ফ্লাইওভার নির্মাণে ওরিয়নের সঙ্গে ডিএসসিসির কোনো বৈধ চুক্তি নেই। কারণ ফ্লাইওভারটি নির্মাণে বিল্ড ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে ২০০৫ সালে কার্যাদেশ দেয়া হয়। তবে শর্ত ভঙ্গের কারণে ২০০৭ সালে চুক্তিটি বাতিল করে তত্কালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের জুনে এর নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করে ওরিয়ন। কিন্তু নতুন করে চুক্তি করা হয়নি। এছাড়া ফ্লাইওভারটি নির্মাণে চুক্তি ছিল যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান বেলহাসা-একম অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে, যার মধ্যে ওরিয়নের শেয়ার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ওরিয়নের সঙ্গে ডিএসসিসির সরাসরি কোনো চুক্তি নেই।
আরবিট্রেশন মামলায় এখনো নিজেদের জবাব জমা দেয়নি ওরিয়ন। ১৬ আগস্ট মামলার শুনানির তারিখ ছিল, সেদিন আদালতে হাজির হয়ে আরো সময় প্রার্থনা করেন প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী।
তবে ফ্লাইওভার পরিচালনা ও টোলের হার নির্ধারণে চুক্তি সংশোধনকল্পে এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই বিভাগের এমআইই উইংয়ের মহাপরিচালক জুয়েনা আজিজকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন অধ্যাপক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য, স্থানীয় সরকার বিভাগের তিনজন ও ডিএসসিসির ছয়জন সদস্য।
এদিকে গত মে মাসে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও নিচের সড়ক মেরামত করেনি ওরিয়ন। এতে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের কিছু অংশ এখনো যানবাহন চলাচলের অনুপযুক্ত রয়ে গেছে। এজন্য ৩১ অক্টোবরের মধ্যে নিচের সড়ক মেরামতে ওরিয়নকে সময় বেঁধে দিয়েছে ডিএসসিসি।
এ প্রসঙ্গে মো. আনছার আলী খান বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ চুক্তি অনুযায়ী নিচের সড়ক মেরামতের দায়িত্ব ওরিয়নের। তবে নির্মাণকাজ চলাকালে প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও তা মেরামত করা হচ্ছে না। এতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এজন্য ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক মেরামতে ওরিয়নকে চিঠি দিয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।