ট্যাপের পানি বোতল ও জারে
মান সনদ বাতিল ৫২ প্রতিষ্ঠানের
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ
বোতল ও জারজাত পানি উৎপাদনকারী ৫২ প্রতিষ্ঠানের মান সনদ বাতিল করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। ট্যাপের পানি সরাসরি জার ও বোতলে ভরে সরবরাহ করায় গত বছরের জুন থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের মান সনদ বাতিল করা হয়েছে। এর বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিসও দেয়া হয়েছে। বিএসটিআই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (প্রশাসন) তাহের জামিল বলেন, লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত পানির মান খারাপ হওয়ায় প্রথমে তাদের নোটিস দেয়া হয়। কাঙ্ক্ষিত জবাব না পেয়ে তাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া অনেকে লাইসেন্স নেয়ার পর আর নবায়ন করেনি। এ কারণেও মান সনদ বাতিল করা হয়েছে।
বিএসটিআইয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সুপেয় পানি উৎপাদনের কথা বলে লাইসেন্সধারী অনেক প্রতিষ্ঠানই নিম্নমানের পানি উৎপাদন ও বাজারজাত করে। বিএসটিআইয়ের মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষায় পানির মান খারাপ পাওয়া যায়। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান তিন বছরের জন্য লাইসেন্স নিয়ে সেটি আর নবায়ন করেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। নোটিস দেয়ার পরও যেসব প্রতিষ্ঠান সংশোধন হচ্ছে না, তাদের মান সনদই বাতিল করা হয়।
বিএসটিআইয়ের বিশেষজ্ঞরা জানান, সুপেয় পানি বাজারজাত করতে হলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ৩১টি মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করতে হয়। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে পানিতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা, তা পরিমাপ করা হয়। এই পরিমাপের জন্য প্লেট কাউন্ট ও টোটাল কলিফর্ম কাউন্ট পরীক্ষা করতে হয়। এর জন্য সংগৃহীত নমুনা ইনকিউবেটরে ৭২ ঘণ্টা রাখার পর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। এ পরীক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান তা করছে না। ফলে মানুষ নিম্নমানের পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এ কারণেই ৫২টি পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর অলিগলি, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে শহর, উপশহর ও গ্রামগঞ্জের পাড়া মহল্লায়ও জারভর্তি সুপেয় পানি গ্লাসপ্রতি ১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব পানি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা অধিকাংশ ভোক্তারই অজানা। নিম্নমানের পানি পান করে অনেকেই ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানিবাহিত রোগ শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং অল্প সময়ের ভেতরে দেহকে নিস্তেজ করে ফেলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলেন, খাবার পানি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিএসটিআইয়ের স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলতে হয়। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পানি উৎপাদন ও বাজারজাত না করে সরাসরি ট্যাপের পানি জারে ভরে বিক্রি করছে। এসব পানিতে ক্ষার, লেদ ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব পানি পান করলে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হবেন। কাজেই নিম্নমানের পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিল যুক্তিযুক্ত। জীবন রক্ষাকারী উপাদানটির মান বজায় রাখার জন্য বিএসটিআইয়ের অভিযান আরো জোরদারের আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত সুপেয় খাবার পানি বাজারজাত করতে প্রথমে ১ হাজার টাকা ফি জমা দিয়ে মান সনদের আবেদন করা হয়। এর পর নমুনা জমা দেয়ার সময় ১৭ হাজার ৫০০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়। নমুনা মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিন বছরের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়। লাইসেন্স নেয়ার পর বিএসটিআইয়ের সার্ভিলেন্স টিম প্রতি ছয় মাস পর পর কারখানা পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে মান পরীক্ষা করে। এতে মান বজায় না থাকলে সতর্ক ও পরে কারণ দর্শাও নোটিস দেয়া হয়। এর পরও সংশোধন না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
বিএসটিআই কর্তৃক লাইসেন্স বাতিল করা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে— স্পারকেল ওয়াটার সিস্টেম প্রতিষ্ঠানের ‘স্পারকেল’, সাথী সারা এন্টারপ্রাইজের ‘সাথী সারা’, নূর ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের ‘নূর’, ইজন ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘ইজন’, জেবি ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের ‘ভিটা’, আনিলা ট্রেড ইন্ক-এর ‘আনিলা’, ফ্যামিলি ড্রিংকিং ওয়াটারের ‘ফ্যামিলি’, প্রবিটি ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ প্রাইভেট লিমিটেডের ‘ডিপ’, স্কিন প্রডাক্টসের ‘ক্লিন ড্রপ’, কুইন্টাপল বেভারেজ প্রাইভেট লিমিটেডের ‘পানি’, ক্রাপ্ট ড্রিংকিং ওয়াটারের ‘ক্রাপ্ট’, বৃষ্টি এ ওয়ান ড্রিংকিং ওয়াটারের ‘বৃষ্টি এ ওয়ান’, রাজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘রাজ’, মুক্তি রাঙ্গা ফুড অ্যান্ড কেমিক্যালের ‘রাঙ্গা’, মিজান কনজিউমারস প্রডাক্টস অ্যান্ড বেভারেজের ‘প্রাইম’, মাস মিনারেল অ্যান্ড প্রডাক্টস লিমিটেডের ‘ডিউ’, গ্লোবাল বেভারেজ লিমিটেডের ‘ভার্জিন’, এক্সিম ট্রেড লিমিটেডের ‘ফ্রেশ ওয়াটার’, অর্ণব ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘নির্মল’, আল সিফা ড্রিংকিং ওয়াটারের ‘আলসিফা’, মিম ক্লাসিক ফুড বেভারেজ কোম্পানি লিমিটেডের ‘ক্লাসিক’, মাসুদ ট্রেডিংয়ের ‘আল বেলী’, ফেবিও ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ‘ফেবিও’, এস কে এন ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘তাম্মাম’, সার্টিনা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ‘ফেভারিট’, গাজীপুর বেভারেজের ‘বস্’, মিদুল ফুড অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ‘তানজিন’, বেস্ট ফুড প্রডাক্টসের ‘বেস্ট’, ঝর্ণা ফুড প্রোডাক্টসের ‘জলি’, আরটিএস অরবিটের ‘রিয়েল’, বেল্লিসসিমা ইন্টারন্যাশনাল (বিডি) লিমিটেডের ‘ভিটা’, মোহনা ফুড প্রডাক্টসের ‘মোহনা’, শামীম ট্রেড লিংকের ‘নাম’, রিভারল্যান্ড কনজিউমারস মার্কেটিংয়ের ‘দেশ’, সিনার্জি অ্যাসোসিয়েটসের ‘সিনার্জি’, ইজি ওয়াটার পিউরিফিকেশনের ‘ইজি’, পর্থিব ফুডস অ্যান্ড কেমিক্যালের ‘মুগ্ধ’, মূসা কনজিউমারস প্রডাক্টসের ‘মুনড্রপ’, বন্ধন ড্রিংকিং ওয়াটারের ‘বন্ধন’, আল ফালাক হিমেল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘আল ফালাক’, নরডিক বেভারেজ অ্যান্ড ফুড লিমিটেডের ‘নরডিকব্লুজ’, মোল্লা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘হাইড্রেস’, ওয়াটার ট্রাকের ‘এভরিডে’, এনএসএএম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘ফয়সাল’, ইশমাম পিওর ড্রিংকিং ওয়াটারের ‘ইশমাম’, সাকী ফুড অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানির ‘সাকী’, এমএস ফুড অ্যান্ড প্রোডাক্টসের ‘টুডে’, এন কে ফ্রেশের ‘এন কে’, অ্যাটাচ এন্টারপ্রাইজের ‘অ্যাটাচ’, মিহেলিয়া এন্টারপ্রাইজের ‘ইছামতি’, ফিট ন্যাচারাল ড্রিংকিং ওয়াটারের ‘ফিট’ ও ইসমা পিওর ড্রিকিং ওয়াটারের ‘ইসমা’।