সড়ক উন্নয়নে ১৭৯ কোটি টাকা চাহিদা সড়ক বিভাগের
মহাসড়কে ১৪৪টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
দেশের জাতীয় মহাসড়কে নিয়মিতই ঘটছে বড় দুর্ঘটনা। নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে বেশি ঘটছে এ জাতীয় দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) এমন ১৪৪টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে। দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এ তালিকা সড়ক বিভাগে পাঠিয়েছে তারা। এসব স্থান ঝুঁকিমুক্ত করতে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে ১৭৯ কোটি টাকা চেয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। যদিও সড়ক বিভাগের চাহিদা অনুসারে অর্থ দিতে নারাজ পরিকল্পনা কমিশন।
বুয়েটের হিসাবে বর্তমানে দেশের জাতীয় মহাসড়কের ঢাকা বিভাগে ৪০, চট্টগ্রামে ৮, সিলেটে ১৪, খুলনায় ১১, বরিশালে ২, রংপুর ৩৫ ও রাজশাহীতে ৩৪টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে, অল্প সময়ের ব্যবধানে ওই স্থানগুলোয় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে তিন থেকে পাঁচের বেশি। নকশায় ত্রুটি না থাকার পরও ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছে— মহাসড়কের এমন স্থানগুলোও চিহ্নিত করেছে এআরআই।
এ প্রসঙ্গে এআরআইয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানভীর বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করি। একটি নির্দিষ্ট স্থানে কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার ওপর ভিত্তি করেই ব্ল্যাক স্পট বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসাব করা হয়। এসব স্থানে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আরো সক্রিয় হওয়া উচিত।’
সূত্র জানায়, নকশায় ত্রুটি, বাঁক, স্থানগত সমস্যা, সড়কের ধরন ও যান চলাচলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে, সেগুলো উন্নয়ন করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
সড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল বলেন, মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে কেন দুর্ঘটনা ঘটে সে বিষয়গুলো আগে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। জমি অধিগ্রহণ কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্য দিকগুলো গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে নিয়মিতই দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন স্থানগুলো বুয়েট নির্দিষ্ট করেছে, যা মেরামত করে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। এজন্য পরিকল্পনা কমিশনের কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ইমপ্রুভমেন্ট অব রোড সেফটি অ্যাট ব্ল্যাক স্পট অন ন্যাশনাল হাইওয়ে শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ১৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা চেয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের হিসাবে ১৪৪টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের উন্নয়নে সড়ক বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দেয়া সম্ভব নয়। এজন্য ২০১৩ সালের মার্চে পাঠানো ডিপিপি অনুমোদন দেয়নি পরিকল্পনা কমিশন। এর পর কয়েক দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে ১৬৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ অর্থ দিয়ে দেশের মহাসড়কের ১৪৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সড়ক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। মহাসড়কের বাঁক সরলীকরণ, ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, পথচারী ক্রসিংয়ের উন্নয়ন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা অপসারণ, সাইন, সিগন্যাল ও রোড মার্কিং স্থাপনসহ এ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে— সড়ক বাঁধে ১২ দশমিক ৯ লাখ ঘনমিটর মাটির কাজ, ৮ দশমিক ১২ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট ৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ, ৩ দশমিক ৬৫ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট সার্ভিস লেনসহ ১৮২ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ, ৫ দশমিক ৫০ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট তিন কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ, বিভিন্ন সড়ক অংশের প্রতি পাশে দেড় মিটার প্রস্থবিশিষ্ট হার্ড শোল্ডার নির্মাণ, সুপার এলিভেশন সংশোধন, বিভিন্ন সড়ক অংশে রোড ডিভাইডার বা ব্যারিয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন অংশে ওভার ব্রিজ নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১-২০ দশকে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী সড়ক নিরাপত্তা জোরদারকরণের লক্ষ্যে রেজুলেশন গ্রহণ করে। এজন্য অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদফতর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।
বুয়েটের ইআরআইয়ের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর আট হাজারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এবং এতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ মারা যায়। সর্বশেষ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ছিল সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এ মহাসড়কের বেশ কয়েকটি ব্ল্যাক স্পট উন্নয়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ায় দুর্ঘটনার মাত্রা কমেছে।
সেক্টরাল স্ট্রাটেজিস প্রোগ্রাম অ্যান্ড পলিসিসে ইউএন ডিকেড অব অ্যাকশন প্ল্যান ফর রোড সেফটির আলোকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা ২৫ শতাংশ হ্রাসের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদফতর উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কে ১৪৪টি ব্ল্যাক স্পট উন্নয়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের জাতীয় মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। সেই সঙ্গে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) আওতাভুক্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে সড়ক বিভাগ অর্থায়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এসব বিবেচনায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।