অনলাইন ব্যাংকিংএ ধাপে ধাপে মাশুলের বোঝা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন ব্যাংকিংয়ে অর্থ লেনদেনের কয়েক ধাপে গ্রাহকদের কাছ থেকে মাশুল আদায় করা হচ্ছে। অর্থ জমার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে মাশুল আদায় করছে ব্যাংকগুলো। একইভাবে আদায় করা হচ্ছে উত্তোলনের ক্ষেত্রেও। এর বাইরে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও ষান্মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে নেয়া হচ্ছে পৃথক মাশুল। পাশাপাশি চেকবই ও এটিএম কার্ডের জন্যও মাশুল আদায় করছে ব্যাংকগুলো। এভাবে একাধিক ধাপে মাশুল আদায়ের মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর চেষ্টা করছে ব্যাংকগুলো।
অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক ::
অনলাইন ব্যাংকিংয়ে অর্থ লেনদেনের কয়েক ধাপে গ্রাহকদের কাছ থেকে মাশুল আদায় করা হচ্ছে। অর্থ জমার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে মাশুল আদায় করছে ব্যাংকগুলো। একইভাবে আদায় করা হচ্ছে উত্তোলনের ক্ষেত্রেও। এর বাইরে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও ষান্মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে নেয়া হচ্ছে পৃথক মাশুল। পাশাপাশি চেকবই ও এটিএম কার্ডের জন্যও মাশুল আদায় করছে ব্যাংকগুলো। এভাবে একাধিক ধাপে মাশুল আদায়ের মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর চেষ্টা করছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাবধারীদের ৫ হাজার ১ থেকে ২০ হাজার টাকা জমা থাকলে বার্ষিক ১০০ টাকা হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ মাশুল বাবদ আদায় করে। পাশাপাশি জেলা শহরের মধ্যে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা অথবা উত্তোলনে ১৫ টাকা মাশুল গুনতে হয়। এর বেশি হলে প্রতি হাজারে ২০ পয়সা মাশুল দিতে হয়। আন্তঃজেলা লেনদেনে এ সেবা মাশুল আরো বেশি। তবে বিভাগীয় শহরের মধ্যে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন ও স্থানান্তরে কোনো সেবা মাশুল আদায় করে না ব্যাংকটি। পাশাপাশি সরকারি বিধি মেনে ভ্যাটও গুনতে হয়, সব ব্যাংকের গ্রাহকের ক্ষেত্রেই যা প্রযোজ্য।
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্ধারিত সেবার বিপরীতেই এ মাশুল আদায় করা হয়। তবে একই সেবায় কয়েক ধাপে মাশুল আদায় হলে তা সংশোধন করা হবে।
বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ মাশুল আদায় করে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও। পাশাপাশি ব্যাংকের জোনাল শাখাগুলোয় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা অথবা উত্তোলনে ২০ টাকা মাশুল আদায় করে ব্যাংকটি। এর বেশি জমা ও উত্তোলনে সমহারে মাশুল আদায় করে তারা।
ব্যাংক এশিয়া আন্তঃজেলার মধ্যে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জমায় ২০ টাকা মাশুল আদায় করে। সমপরিমাণ অর্থ উত্তোলনে আদায় করে ৫০ টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংক আন্তঃশহরে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জমায় ৫০ টাকা ও উত্তোলনে ১০০ টাকা মাশুল আদায় করে। এবি ব্যাংক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ক্ষেত্রে কোনো মাশুল না নিলেও এর বেশি হলে ১০০ টাকা আদায় করে। ২ লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলনে ব্র্যাক ব্যাংক কোনো মাশুল আদায় করে না। তবে এর বেশি হলে প্রতি উত্তোলনে ১০০ টাকা আদায় করে। একইভাবে আরো কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েক ধাপে মাশুল আদায় করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এক সেবায় কয়েক ধাপে মাশুল আদায়ের সুযোগ নেই। কোনো ব্যাংক এমনটা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কী হারে মাশুল আদায় করবে তার কোনো সীমারেখা নেই। প্রতিটি ব্যাংক সেবা মাশুলের হার কার্যকরের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে তা জমা দেয়ার পাশাপাশি নিজস্ব ওয়েবসাইট ও শাখা কার্যালয়েও সরবরাহ করে। ঘোষণার অতিরিক্ত মাশুল আদায় করলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।
ব্যাংকগুলোর সেবা মাশুলের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, সব ব্যাংকই হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাশুল আদায় করে। চেকবই প্রদান ও এটিএম কার্ডেও মাশুল গুনতে হয় গ্রাহকদের। পাশাপাশি অনেক ব্যাংকই পৃথক অনলাইন সেবা মাশুল আদায় করে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক অনলাইনে অর্থ জমা ও উত্তোলনের মাশুল আদায় করছে। ফলে গ্রাহকদের এক সেবা নিতে গিয়েই কয়েক দফায় মাশুল গুনতে হচ্ছে।
গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ অভিযোগ কেন্দ্রের বার্ষিক প্রকাশনা অনুষ্ঠানেও এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। গ্রাহকদের এক-তৃতীয়াংশ ১০টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এর পরই রয়েছে জনতা, অগ্রণী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের নাম। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এর পরই রয়েছে প্রাইম, ব্র্যাক, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের ১৮৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। এর মধ্যে ১৮ জন ব্যাংকগুলোর মহাব্যবস্থাপক বা তার উপরের পদে কর্মরত ছিলেন। আরো দুজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।