‘আতঙ্কই’ ইবোলাকে করেছে আরো সংক্রামক!
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইবোলার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে ঘোষণায় বলেছিলেন, ‘পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চলের রোগটিকে আয়ত্তে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এক বিলিয়ন ডলার ও তিন হাজার সৈন্য পাঠাতে পারে। ইবোলার কারণে অর্থনীতি ধসে পড়ার ঝুঁকি শুধু আফ্রিকায় নয়, ছড়িয়ে আছে গোটা বিশ্বে। এক্ষেত্রে আমরা আর সময়ক্ষেপণ করতে পারি না।’
কিন্তু ইবোলার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এরই মধ্যে বেশ সময় নষ্ট করা হয়েছে। গত মার্চে রিপাবলিক অব গিনির এক দুর্গম অঞ্চলে এ রোগের সংক্রমণ শুরু হয়, যা পরে লাইবেরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এপ্রিলেই রোগের ভীতি গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার পরের মাসেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভাইরাসটি আক্রমণ করে সিয়েরালিওনে। আর জুনে রোগটি প্রথমবারের মতো লাইবেরিয়ার রাজধানী মোনরোভিয়ার মতো নগর অঞ্চলে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। জুলাইয়ের শেষে ইবোলার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে যায় আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ায়। আর এখন ভাইরাসটির চাইতেও আরো দ্রুতগতিতে ও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ভীতি।
এ ভীতির কারণে গতকাল শনিবার ভারত সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় আফ্রিকার বাণিজ্য সম্মেলনে তারা যোগ দিচ্ছে না। আফ্রিকার ৫০টিরও বেশি দেশের এ সম্মেলনে ভারতের প্রায় এক হাজার প্রতিনিধি যোগ দেয়ার কথা ছিল। এখন সম্মেলনটি আগামী বছর অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আফ্রিকার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে দেশটি।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, দুই ধরনের সংক্রমণ আছে। একটি ভাইরাসকে নিয়ে, অন্যটি ভাইরাসের সংক্রমণের ভীতি নিয়ে। বিশ্বব্যাংকের নতুন একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইবোলা-সম্পর্কিত স্বাস্থ্যসেবা সার্বিক অর্থনীতিতে মোটেই প্রভাববিস্তারকারী নয়। বরং ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয় শুধু ভীতির কারণে। এ ভীতিতেই অচল হয়ে যায় একটি দেশের অর্থনীতি।
অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভাইরাসটি দ্রুত অভিযোজিত হচ্ছে। এটাই ভাইরাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং এ কারণেই মানুষ বেঁচে আছে। কারণ অন্যান্য ভাইরাসের মতো ইবোলা ভাইরাসটি যদি অভিযোজিত হয়, তাহলে এটি আর শক্তিশালী থাকবে না। তাই পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে, রোগটি এমন সব অঞ্চলে আঘাত হানছে, যেখানে বলতে গেলে স্বাস্থ্যসেবার কোনো কাঠামোই নেই। সুপেয় পানি থেকে শুরু করে নেই পর্যাপ্ত অবকাঠামো।
এটা অবশ্য নতুন কোনো সমস্যা নয়। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, গত বছর লাইবেরিয়ায় স্বাস্থ্যসেবার পেছনে মাথাপিছু বার্ষিক খরচ ছিল ৬৫ ডলার এবং গিনিতে ৩২ ডলার। এমনকি এ দুই দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকা নাইজেরিয়ায়ও মাথাপিছু খরচ করা হয় ১০০ ডলারেরও কম। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয় করা হয় ৯ হাজার ডলার।
ইবোলা কোনো রহস্যপূর্ণ রোগ নয় এবং এর নিরাময় সম্ভব। এটিকে ঠেকাতে সবার আগে প্রয়োজন আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের খুঁজে বের করা। এদের খুঁজে বের করা গেলে এবং তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখলে রোগটির প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে ঠেকানো সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য উদঘাটন করতে প্রয়োজন দক্ষ জনবল, যা পশ্চিম আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোয় একেবারেই বিরল।
কিন্তু শুধু আর্থিক সহায়তাই এ রোগের নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয়। আরো আগে এই ১ বিলিয়ন অর্থ দিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা গেলে, এই এক প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচত হাজারো জীবন। তাই প্রয়োজন অবকাঠামো খাতে আরো উন্নয়ন সম্পন্ন করা। এতে অন্যান্য আরো অনেক রোগের সংক্রমণ তো বটেও, সবচেয়ে সংক্রমক রোগ ভীতিকে আয়ত্তে আনা সম্ভব অনেকখানি।