বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ লাখ
মাত্র ১ হাজার ৮৩ কৃষক ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ
বন্যায় দেশের ২৪ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৮ হাজার কৃষক। এ সময় বানের পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের বোনা আমন, রোপা আমন, আউশ, আমন বীজতলা থেকে শুরু করে সবজি, পাট, মরিচ ও ভুট্টা। অথচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ হাজার ৮৩ কৃষককে দেয়া হচ্ছে শুধু আমনের চারা।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
গত মাসে তিন সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী বন্যায় দেশের ২৪ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৮ হাজার কৃষক। এ সময় বানের পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের বোনা আমন, রোপা আমন, আউশ, আমন বীজতলা থেকে শুরু করে সবজি, পাট, মরিচ ও ভুট্টা। অথচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ হাজার ৮৩ কৃষককে দেয়া হচ্ছে শুধু আমনের চারা। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশের পাঁচ জেলায় প্রত্যেক কৃষককে এক বিঘা জমিতে রোপণ উপযোগী আমনের চারা বিতরণ করা হচ্ছে। চলতি মাসের ১২ তারিখে শুরু হয়েছে এ চারা বিতরণ। চলবে চলতি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত। এসব চারা দিয়ে মোট ১ হাজার ৮৩ বিঘা জমিতে আমন রোপণ করা যাবে। যদিও এবারের বন্যায় শুধু আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৪১ কৃষকের।
এদিকে বিপুল ক্ষতির বিপরীতে যত্সামান্য সহায়তা বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ও মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা। প্রতিনিয়তই কৃষকদের অভিযোগের মুখে পড়ছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন আমরা কেবল কৃষকদের পরামর্শই দিতে পারি। আমাদের কাছে এর বিকল্প কিছুই নেই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতির শিকার কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি, কীভাবে ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায়, বিকল্প কি কি আবাদ করা যেতে পারে। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও এর মধ্যে থাকছে না কোনো সুখবর।
আপাতত চারা বিতরণ কর্মসূচির বাইরে আর কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সম্প্রসারণ) মো. মোশারফ হোসেন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, যেসব এলাকায় আমন করা সম্ভব, সেখানে আমন আবাদে সহযোগিতা করতে চারা বিতরণ করা হচ্ছে। এতে আশপাশের কৃষকরাও নতুনভাবে আমন আবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সামনের দিনে যদি কোনো ফসলে প্রয়োজন হয়, তবে এ ধরনের সহযোগিতামূলক কর্মসূচি নেয়া হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, কয়েক সপ্তাহের বন্যায় তলিয়ে যায় দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা। আক্রান্ত হয় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ জেলাসহ পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বেশকিছু এলাকা। ক্ষতির কবলে পড়েন সাড়ে ১৩ লাখ কৃষক। এর মধ্যে রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ লাখ ৩ হাজার কৃষকের। এছাড়া সবজিতে ১ লাখ ১ হাজার ৯০২, বোনা আমনে ৫৮ হাজার, আউশে ৫২ হাজার কৃষক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এর বাইরে মরিচে ২ হাজার, কলায় ১ হাজার ৭৭১, আখে ৪৬০, পাটে ২০৫, ভুট্টায় ৩১৫ ও লেবুতে ৬৭৫ জন কৃষক ক্ষতিতে পড়েছেন। সব মিলিয়ে এবারের বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রোপা আমনে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া বোনা আমনে ১১৭ কোটি, আউশে ৪১ কোটি, সবজিতে ১৩৪ কোটি, আমন বীজতলায় ৪৪ কোটি, মরিচে ৩৬ কোটি, কলায় ২৪ কোটি ও ভুট্টায় ৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে আখে ৫ কোটি ও লেবুতে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। সম্প্রতি তারা বন্যাকবলিত এলাকার সব এনজিওকে আগামী দুই মাসের জন্য ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় না করার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কৃষকদের বিশেষ সুদে ঋণ বিতরণের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে রবিশস্য ও আমদানি বিকল্প ফসল আবাদে রেয়াতি হার সুদে ঋণ প্রদান জোরদারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ কিছু চারা বিতরণেই সীমিত।
ক্ষতি কাটিয়ে তোলা ও ভবিষ্যৎ ক্ষতি রোধের বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. ওয়ায়েস কবীর বলেন, কৃষককে নাবী জাতের আমন ধান আবাদ ছাড়াও আগাম রবিশস্য আবাদের প্রচেষ্টা নিতে হবে। এছাড়া বন্যা থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে বাঁধ মেরামত, সঠিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনা ও নদী খনন করতে হবে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আরো বেশি সমন্বয় প্রয়োজন।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২৪ জেলায় প্রায় ২০ লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফসলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমি, যা মোট ফসলি জমির ১৩ শতাংশের বেশি।