গঠনতন্ত্র মানছে না জামায়াত, স্বপদে থাকছেন সাঈদী
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড হলেও দলীয় পদ হারাচ্ছেন না দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অতীতে দুর্নীতির অভিযোগে আটক হওয়ামাত্র দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন কয়েকজন জামায়াত নেতা। তবে এবার সর্বোচ্চ আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পরও পদ বাতিল হচ্ছে না।
পূর্বদিক ডেস্ক ::
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড হলেও দলীয় পদ হারাচ্ছেন না দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অতীতে দুর্নীতির অভিযোগে আটক হওয়ামাত্র দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন কয়েকজন জামায়াত নেতা। তবে এবার সর্বোচ্চ আদালতে দণ্ডিত হওয়ার পরও পদ বাতিল হচ্ছে না। কর্মপরিষদের অনুমোদনে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে পদ টিকিয়ে রাখা হয়েছে দলীয় আমির মতিউর রহমান নিজামীর। দণ্ডিত আরও চার নেতার পদ টিকে আছে। দণ্ডিত হলে দলের পদ থাকবে কি-না তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই জামায়াতের গঠনতন্ত্রে। দলটির কোনো নেতাই এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। ২০০৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন দলটির কর্মপরিষদ সদস্য নীলফামারী-৩ আসনের এমপি মিজানুর রহমান চৌধুরী। গ্রেফতার হওয়ার পরদিনই তাকে বহিষ্কার করা হয়।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থান জামায়াতের। সাঈদী জামায়াতের সর্বোচ্চ ফোরাম নির্বাহী পরিষদ সদস্য, নায়েবে আমির ও কর্মপরিষদ সদস্য। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাঈদী তিনটি পদেই বহাল থাকবেন। এখনও সাঈদীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি। আরও কয়েক মাস লেগেযেতে পারে পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতে। যুদ্ধাপরাধের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) সুযোগ নেই। আবদুল কাদের মোল্লাও এ সুযোগ পাননি। জামায়াতের এক কর্মপরিষদ সদস্য সমকালকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিভক্ত রায় হওয়ায় সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাঈদীর রিভিউয়ের সুযোগ পাওয়া উচিত। রিভিউয়ের সুযোগ পেলে তিনি বেকসুর খালাস পাবেন এ আশা করছি। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বিবৃতিতে একই কথা বলেন।
সাঈদী রিভিউয়ের সুযোগ না পেলে তার পদ বাতিল হবে কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের এ কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, ‘দলের পদ সরকারি চাকরি নয়। দণ্ডিত হলেই পদ চলে যায় না।’ সাঈদীর পদ বাতিলের সম্ভাবনাকে নাকচ করে কর্মপরিষদের এ সদস্য বলেন, ‘জামায়াতের প্রত্যেক নেতাকর্মী বিশ্বাস করেন, সাঈদী নির্দোষ। তিনি জুলুমের শিকার হয়েছেন। দলের পদ বাতিল হলে তার প্রতি আরও একটি জুলুম হবে।’ এ নেতা স্বীকার করেন, আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত সাঈদীকে পদে বহাল রেখে দলের কোনো লাভ নেই। কিন্তু পদ থেকে বাদ দিলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াতের যে অবস্থান, তা দুর্বল হবে; কর্মীরা বিভ্রান্ত হবেন। অন্য নেতাদের বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উৎসাহ হারাবেন।দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন নিজামী। যুদ্ধাপরাধের মামলার রায়ও অপেক্ষমাণ। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ১৫ (৬) ধারা অনুযায়ী দলের আমির একাধারে ছয় মাস দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে তার পদ শূন্য হবে। অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য আমির পদে নতুন নির্বাচন হবে।
কারাগারে থাকায় নিজামী ৫১ মাস দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলেও তার পদ শূন্য হয়নি। সর্বশেষ মুদ্রিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ১৫ (৬) ধারা অনুযায়ী ‘বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা যুক্তিযুক্ত মনে করিলে এই রূপ নির্বাচন যুক্তিসঙ্গত সময়সীমা পর্যন্ত স্থগিত করিয়া ভারপ্রাপ্ত আমিরের কার্যকাল বর্ধিত করিতে পারিবে।’ এ ধারা অনুযায়ী কোনো অবস্থাতেই আমিরের পদে মেয়াদের বেশি সময় নির্বাচন স্থগিত রাখা যাবে না। ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামী গ্রেফতার হন। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর তার পদ শূন্য হওয়ার কথা ছিল। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাকে মজলিসে শূরার ক্ষমতাবলে, ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পদে বহাল রাখার সুযোগ ছিল। ২০০৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচিত নিজামীর পদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এরপর আমির নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।২০১০ সালের পর জামায়াতের মজলিসে শূরার সভা হয়নি। গঠনতন্ত্রের ২৩ (৭) ধারা অনুযায়ী, মজলিসে শূরার বৈঠক আহ্বান সম্ভব না হলে কর্মপরিষদ মজলিসে শূরার সব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। কর্মপরিষদের অনুমোদনেই টিকে আছে নিজামীর পদ। তবে কর্মপরিষদেরও অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখার অধিকার নেই। তবে এর আগে জামায়াতের সাবেক আমির কারাগারে থাকায় মাওলানা আব্বাস আলী খান দীর্ঘ দিন ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বে ছিলেন। তখন গোলাম আযম কারাগারে থাকা অবস্থাতেই তাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।
তবে জামায়াতের দু’জন মজলিসে শূরার সদস্য বলেন, সরকারের বাধার কারণেই রুকন সম্মেলন (দলীয় কাউন্সিল) কিংবা মজলিসে শূরার বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। ২০০৯ সালে নির্বাচিতরাই স্বপদে আছেন। কবে নাগাদ এসব নির্বাচন হবে তা বলতে পারেননি কোনো নেতাই। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দলীয় সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জমান উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। দুই নির্বাহী পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ আদালত অবমাননার কারণে দণ্ডিত হলেও আপিল না করে আত্মগোপনে আছেন। তাদের পদও বহাল আছে।