এশিয়ান গেমস ফুটবল
হারার আগেই হারেনি বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২:২৪ অপরাহ্ণ
স্পোর্টস ডস্কে ::
উজবেকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে প্রত্যাশা কী ছিল? অবশ্যই জয় নয়। এশিয়ার মহাশক্তিধর এই ফুটবল-খেলিয়ে দেশের বিপেক্ষ ‘যতটা সম্ভব কম গোল খাওয়া’র উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশের লক্ষ্য প্রায় পূরণই হয়েছে। ম্যাচের প্রথম ৩৪ মিনিটে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ বাকি ৫৬ মিনিটসহ অতিরিক্ত আরও ৪ মিনিট এশিয়াড সোনার অন্যতম দাবিদার উজবেকদের রুখেই দিয়েছে। লক্ষ্যের যে অংশটুকু পূরণ হয়নি, তার জন্য দায়ী করা যেতে পারে গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ ও বাকি ডিফেন্ডারদের। ৩৪ মিনিটের মধ্যে তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার পুরো দায়ভার যে তাঁদেরই।
হ্যাঁ, রক্ষণের ভুলেই প্রথমার্ধেই খেলা থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। খেলার ১৪ মিনিটে গোলরক্ষক ও রক্ষণের দৃষ্টিকটু ভুলে প্রথম গোল করে এগিয়ে যায় উজবেকিস্তান। গোলটি এতটাই দৃষ্টিকটু ছিল যে, গোলদাতা শোদিয়েভ বোধহয় হোটেলে গিয়ে নিজের সৌভাগ্যের কথা মনে করে কিছুক্ষণ আনমনে হাসবেন। ২০ মিনিটে উজবেকদের দ্বিতীয় গোল, সেটাও বাংলাদেশ রক্ষণের বদন্যতাতেই। গোলদাতা ওই শোদিয়েভই। বক্সের মধ্যে উড়ে আসা একটি ক্রসে শোদিয়েভকে যেন গোল করতে আমন্ত্রণই জানিয়ে রেখেছিলেন ইয়ামিন মুন্না, কেষ্ট কুমার ও তপু বর্মণেরা। উজবেকিস্তানের তৃতীয় গোল আরও ১৪ মিনিট পর—খেলার ৩৪ মিনিটে। বাম প্রান্তে পাওয়া একটি মাটিঘেঁষা ফ্রি-কিক থেকে বক্সের মধ্যে ফাঁকায় দাঁড়ানো রশিদভ চকিত শটে পরাভূত করেন গোলরক্ষক রাসেলকে। গোলরক্ষকের সামনে এ সময় লাইন করে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা।
তিন গোলে পিছিয়ে পড়ে কিছুটা গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। জামাল ভূঁইয়া, হেমন্ত ভিনসেন্টরা এ সময় বল নিজেদের পায়ে ধরে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু সুঠামদেহী উজবেক খেলোয়াড়দের শারীরিক যোগ্যতা ও স্কিলের কাছে বারবারই খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তাঁরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের নায়ক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম নিষ্প্রভ থাকায় কোনো আক্রমণই দানা বাঁধছিল না। ৪০ মিনিটে হেমন্ত প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে এক দূরপাল্লার শটে পরীক্ষার মুখোমুখি করেছিলেন উজবেক গোলরক্ষক সুইয়োনভ এলদোরবেককে। শটটি বেশ ভালো ছিল। আরও একটু বাঁক পেলে ওটা থেকে গোলও হতে পারত।
উজবেকদের স্কিল ও দমের কথা বিবেচনা করে কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ বোধ হয় এরপর নিচে নেমে খেলাকেই কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেন। হেমন্তর ওই শটের পর পুরো ম্যাচে উজবেকদের গোলে আরও কোনো শট নেই বাংলাদেশের। গোলের সুযোগ তৈরি তো অনেক দূরের ব্যাপারই।
দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় উজবেকদের পায়ে পায়ে থেকেছেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ম্যাচের শুরুতে গোলের বন্যা বয়ে যাওয়ার যে ইঙ্গিত ছিল, সেই ইঙ্গিতকে মিথ্যে প্রমাণ করতে পারার কৃতিত্বও কিন্তু কম নয়। শক্তিধর উজবেকিস্তান যে এ সময় বাংলাদেশের পোস্টেও খুব বেশি শট নিতে পেরেছে, তা বলা যাবে না। গোটা ম্যাচেই বাংলাদেশের গোলে উজবেকদের শটের সংখ্যা আট। খুব কি বেশি?
দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ খেলেছেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক রাসেল। বাতাসে উড়ে আসা কয়েকটি বল উজবেকিস্তানের দীর্ঘদেহী ফরোয়ার্ডদের মাথার ওপর থেকে ছোঁ মেরে লুফে নিয়ে ইনচনের আনসান-ওয়া স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের বাহবাই কুড়িয়েছেন তিনি।
এই অর্ধে অসম্ভব পরিশ্রম করে খেলেছেন বাংলাদেশের রক্ষণ-সৈনিকেরা। যে প্রত্যয় এ সময় তাঁরা দেখিয়েছেন, সেটা খেলার শুরুর দিকে থাকলে এই খেলার স্কোর লাইনটা আরও ভদ্রোচিত হতে পারত। তার পরও উজবেকিস্তানের বিপক্ষে এই কঠিন ম্যাচে বাংলাদেশের ফুটবলারদের লড়িয়ে মনোভাব প্রশংসা পেতেই পারে। আন্তর্জাতিক ম্যাচের অভাব আর সার্বিক সুযোগ-সুবিধার দৈন্য ও নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে আড়াল করে এশিয়ার শীর্ষ এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াইটা একেবারে মন্দ করেনি বাংলাদেশ।
২২ সেপ্টেম্বর গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে হংকংয়ের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এশিয়াড ফুটবলে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে ইতিহাস গড়তে ওই ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে।
উজবেকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল: মোহাম্মদ রাসেল মাহমুদ, মোহাম্মদ রায়হান হাসান, কেষ্ট কুমার বোস, তপু বর্মণ, ইয়ামিন মুন্না, মোহাম্মদ ইয়াসিন খান, হেমন্ত ভিনসেন্ট, মামুনুল ইসলাম, তকলিচ আহমেদ, সোহেল রানা, জামাল ভূঁইয়া (বদলি খেলোয়াড় জাহিদ হোসেন)।