ভারতে পুলিশে নারীর সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ করার প্রস্তাব
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ভারতের পুলিশ বাহিনীতে যাতে মহিলাদের সংখ্যা অন্তত ৩০ শতাংশ করা হয়, সেই মর্মে প্রস্তাব দিয়েছে দেশের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ওই দফতরের মন্ত্রী মানেকা গান্ধী আজ দিল্লিতে জানিয়েছেন, সার্বিকভাবে পুলিশ যাতে মহিলাদের অধিকার ও মর্যাদা সম্বন্ধে সচেতন হয় সে জন্যই এই উদ্যোগ জরুরি এবং ইতিমধ্যেই কোনও কোনও রাজ্যে সেই কাজ শুরুও হয়ে গেছে।
নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা অবশ্য বলছেন, সংখ্যা বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি হল মহিলারা পুলিশ বাহিনীতে যাতে উপযুক্ত গুরুত্ব পান সেটা নিশ্চিত করা। ভারতে ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে যে মোট প্রায় ষোলো লক্ষ পুলিশকর্মী আছেন তার মধ্যে মাত্র চুরাশি হাজারের মতো মহিলা – অর্থাৎ প্রতি কুড়িজন পুলিশের মধ্যে একজন মোটে নারী। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখন বলছে, তারা চায় প্রায় প্রতি তিনজন পুলিশের মধ্যে একজনই হবেন নারী – যাতে মহিলাদের অধিকারের প্রতি পুলিশ আরও বেশি সম্মান দেখায় এবং থানায় এসে মহিলারা অন্যায়ের প্রতিকার পেতে পারেন।
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী এদিন দিল্লিতে ঘোষণা করেন, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
মহিলাদের জন্য আলাদা করে মহিলা-থানা, কিংবা মহিলাদের ওপর ঘটা অপরাধের প্রতিকারের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার চেয়ে অনেক ভাল মূল বাহিনীতেই মহিলাদের সংখ্যা বাড়ানো। ভারতের কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মিস গান্ধী জানান, দেশের সব মুখ্যমন্ত্রীকেই তিনি চিঠি লিখেছেন যাতে পুলিশ বাহিনীতে মহিলাদের সংখ্যা অন্তত তিরিশ শতাংশ করা হয়। এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে গুজরাটে এরই মধ্যে এই উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে, ওড়িশাও শিগগিরি এই কাজ শুরু করছে।
ভারতে পুলিশ বিভাগ রাজ্য সরকারের অধীন, আর তাই এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারগুলোকে বোঝাতে মিস গান্ধী মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সরাসরি কথাও বলছেন। যেমন, গতকালই তাঁর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের – যেখানে পুলিশ বাহিনীর আকারও সবচেয়ে বড়।
মানেকা গান্ধী আরও বলছেন, ‘মহিলাদের জন্য আলাদা করে মহিলা-থানা, কিংবা মহিলাদের ওপর ঘটা অপরাধের প্রতিকারের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার চেয়ে অনেক ভাল মূল বাহিনীতেই মহিলাদের সংখ্যা বাড়ানো। সে ক্ষেত্রে পুলিশের লিঙ্গ বা বয়স-সংক্রান্ত সংবেদনশীলতা বাড়বে বলে আশা করা যায়।’ ভারতে নারী আন্দোলনের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা অনেকেই প্রাথমিকভাবে মন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা সেই সঙ্গেই বলছেন শুধু মহিলা পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোটাই সমাধান নয় – বাহিনীতে যাতে তারা যথাযথ গুরুত্ব পান এবং নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট ভূমিকাটা পালন করতে পারেন সেটা দেখাটাও জরুরি।
কলকাতায় একটি নারী অধিকার সংস্থার নেত্রী শাশ্বতী ঘোষ যেমন বলছিলেন, ‘আকারে নারী হলেই যে সেই পুলিশরা মেয়েদের প্রতি সংবেদনশীল হবেন আমাদের অভিজ্ঞতা অবশ্য তা বলে না। তবে হ্যাঁ, মেয়ে পুলিশদের সামনে মেয়েরা কিছুটা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, তাদের অসুবিধার কথা খুলে বলতে পারেন সেটা আমরা দেখেছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘মহিলা পুলিশরা যদি ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না-পান, বসার ভাল জায়গা না-পান বা থানায় তাদের পোশাক বদলানোর ব্যবস্থাও না-থাকে তাহলে তারা কাজটা করবেন কীভাবে? কলকাতায় অনেক মহিলা পুলিশকর্মী আমাদের বলেছেন একই ঘরে পুরুষ সহকর্মীরা যে ধরনের বাক্যবিনিময় করেন বা যে ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন তাতে তাদের বসতেও অস্বস্তি হয়!’
তা ছাড়া সারা দেশের পুলিশ বাহিনীতে মহিলাদের সংখ্যা পাঁচ শতাংশ থেকে একলাফে তিরিশ শতাংশে নিয়ে যাওয়াটাও যে মোটেই সহজ নয় সে কথাও তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। সামাজিক ও মানসিক বাধা কাটিয়ে ওঠা ছাড়াও এর জন্য পুলিশে নতুন নিয়োগের হার অনেকগুণ বাড়াতে হবে, খরচও বাড়বে সেই অনুপাতে – এবং তারপরেও সময় লেগে যাবে অন্তত পাঁচ থেকে দশ বছর!