মহেশখালীতে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র
মালয়শিয়ান কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ সই করছে পিডিবি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ
মহেশখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। মালয়েশিয়ার দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আগামী সোমবার এ লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে। দুই দেশের সমন্বয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের তৃতীয় উদ্যোগ এটি।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি তেনেগা ন্যাশনাল বারহেড ও পাওয়ারটেক বারহেডের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে এ সমঝোতা স্মারক সই হবে। সমঝোতার আলোকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার বিনিয়োগে একটি যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠন করা হবে। জেভি কোম্পানিটি মহেশখালীর প্রস্তাবিত ‘বিদ্যুৎ হাবে’ কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে; যাতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার ফিফটি-ফিফটি অংশীদারিত্ব থাকবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে একই প্রক্রিয়ায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়া পটুয়াখালীতে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আরো একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এমওইউ স্বাক্ষর করেছে।
জানা গেছে, সমঝোতা স্মারকের অধীনে তেনেগা ও পাওয়ারটেকের সঙ্গে পিডিবি একটি যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠন করবে। ওই কোম্পানিই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির আদলে এক্ষেত্রেও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাস্তবায়নের জন্য একটি কোম্পানি গঠন করা হবে। ওই কোম্পানিতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সমানসংখ্যক সদস্য পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে দুই দেশের প্রতিনিধি ভাগাভাগি করে দায়িত্ব পালন করবেন। সমঝোতার আলোকে গঠিত যৌথ মূলধনি কোম্পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য অর্থায়ন ও দরপত্র আহ্বান করবে। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে।
রামপালের বিষয়ে পরিবেশবাদীদের আপত্তি থাকলেও মহেশখালীতে এখনো কোনো আপত্তি ওঠেনি। বিদ্যুৎ বিভাগ সম্প্রতি ওই এলাকায় জমি অধিগ্রহণের জন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া মহেশখালী দ্বীপে ৫০ হাজার টনের কয়লাবাহী জাহাজ প্রবেশ করার মতো গভীরতা থাকায় সেখানেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কয়লা পরিবহনজনিত খরচ কম পড়বে। এরই মধ্যে মহেশখালীতে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির জন্য একটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লা খালাসের বন্দর ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
মহেশখালীর সম্ভাব্যতা জরিপে বলা হয়েছে, প্রতিটি ২৪০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে কয়লা আনা হবে, যার ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার টন। এজন্য সমুদ্রে ১৩ মিটার পানির গভীরতা থাকতে হবে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বছরে ৫৩ বার কয়লা আনার প্রয়োজন হবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ১০ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সব বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে ‘মেগা সাইজ’ প্রকল্প। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলবে। সরকার যে দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা করছে, তাতে এসব প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রেরিত এক বিশেষ দূত বাংলাদেশ সফর করে বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ওই আলোচনার সূত্র ধরে তেনেগা প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সফর করেন। পিডিবি ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা মালয়েশিয়া সফর করে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ ও যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেন; যার পরিপ্রেক্ষিতে এ সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে। গত বছরের শেষ ভাগে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।