সম্মানজনকভাবে অব্যাহতি দেওয়ার চিন্তাভাবনা
মওদুদের ওপর ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৪:৪৬ অপরাহ্ণ
‘বাংলাদেশ : ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ : ২০০৭-২০০৮’ বইয়ে তোলপাড়
ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বিএনপির ভুলত্রুটি নিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা বইয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। নিজের লেখা বইয়ে বারবার বিএনপিকে নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করায় তাকে দল থেকে সম্মানজনকভাবে ‘অব্যাহতি’ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। আপাতত দলীয় কোনো কর্মসূচিতে তাকে না নেওয়ার জন্যও নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইভাবে তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে বিকল্প নেতা খোঁজার জন্য বিএনপির হাইকমান্ড নির্দেশ দিয়েছে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।জানা গেছে, দলের দুঃসময়ে ব্যারিস্টার মওদুদের লেখা বইয়ের কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ নিয়ে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে দল থেকে সম্মানজনকভাবে অব্যাহতি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। রবিরার রাতে গুলশান কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ‘বিতর্কিত’ এ বই লেখার জন্য ব্যারিস্টার মওদুদকে দল থেকে বহিস্কারের দাবি জানান। জবাবে বেগম জিয়া তাদের বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ একজন বয়স্ক নেতা। তাকে বিদায় করতে হলে সম্মানজনকভাবেই করতে হবে। বহিস্কার না করে অব্যাহতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যায়। তবে আগামী নির্বাচনে ব্যারিস্টার মওদুদের আসনে বিকল্প নেতা খোঁজার জন্য বেগম জিয়া সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে দলের কোনো কর্মসূচিতে মওদুদ আহমদকে না নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা ‘বাংলাদেশ : ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ : ২০০৭-২০০৮’ বইয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিএনপি জোট সরকারের অপশাসন, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, দলের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, জামায়াত ইস্যু, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। শনিবার সুপ্রিমকোর্ট বার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।এর আগে ‘কারাগারে কেমন ছিলাম’ বই লিখে বিএনপিতে তোপের মুখে পড়েন ব্যারিস্টার মওদুদ। ওই বইয়ের ৩২৪ ও ৩২৫ পৃষ্ঠায় ১৫ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের সমালোচনা করে তিনি লেখেন, ‘আজ জাতীয় শোক দিবস বিতর্কিত একটি জন্মদিন হিসেবে আজ বেগম জিয়ার ৬৩তম জন্মদিন। সঠিক হলেও আমি হলে আমার জন্মদিন এক দিন আগে বা পরে পালন করতাম। শেখ মুজিবের হত্যা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতাম। এটা একটা রুচিবোধের বিষয়।’সূত্র জানায়, গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশের পর বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা রবিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তারা বিএনপিকে নিয়ে মওদুদের বইয়ের লেখার বিভিন্ন অংশ বেগম জিয়ার কাছে তুলে ধরেন। জবাবে বেগম জিয়া তাদের বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ বয়স্ক একজন নেতা। এর আগেও তিনি তার লেখা বইয়ে বিএনপি, জিয়া পরিবার নিয়ে বিতর্কিত কথাবার্তা বলেছেন। বয়সের কারণেই হয়তো তিনি এসব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। তবে দীর্ঘদিন তিনি বিএনপির সঙ্গে আছেন। তাকে বিদায় দিতে হলে সম্মানজনকভাবেই দিতে হবে। এ সময় তিনি মওদুদকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ভাবতে নেতাদের মতামত চান।এদিকে মওদুদের লেখা বইয়ে বিএনপির মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের হতাশার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। তৃণমূলের নেতারাও ব্যারিস্টার মওদুদকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন।বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ যে সমালোচনা করেছেন তা স্থায়ী কমিটির সদস্যপদে থেকে শোভা পায় না। তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেই এ সমালোচনা করতে পারতেন। তা ছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তিনি আইনমন্ত্রী ছিলেন। তখন তো তিনি এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। কিংবা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগও করেননি।আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘দলের এ দুর্যোগ মুহূর্তে কেন মওদুদ এসব লেখা লিখে আলোচিত হতে চান তা আমরা জানি না। তবে তৃতীয় কোনো পক্ষের হয়ে বিএনপিকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করছেন কি না, তা-ও আমরা জানি না।’ তবে অসৎ কোনো উদ্দেশ্য থেকেই এ বই লেখা বলে মন্তব্য করেন তিনি।সূত্র জানায়, দলের দফতর সম্পাদক রিজভী আহমেদকে রবিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে পাঠান বেগম জিয়া। সেখানে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তখন বেগম জিয়াই দলের পক্ষ থেকে রিজভী আহমেদকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কথা বলেন। এ কারণেই গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মওদুদকে নিয়ে রিজভী আহমেদ দলের অবস্থান তুলে ধরেন।সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘কাক সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে গেলেও কাকই থাকে। ডিগবাজ, আদর্শহীন ও দলছুট নেতার বইয়ে বিএনপির কিছুই আসে যায় না। নিজের বাড়ি রক্ষার জন্য, নাকি ক্ষমতাসীন দলের মন রক্ষার জন্য এরকম ভাষ্য তিনি দিয়েছেন তা-ও আমরা জানি না। তবে আমি মনে করি তার এহেন ভাষ্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সৌজন্যে