যৌন হয়রানির অভিযোগে ঢাবি অধ্যাপক বরখাস্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৬:২১ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
শিক্ষার্থীদের দিনভর আন্দোলনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট জরুরি সভায় বসে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। সোমবার রাতে সিন্ডিকেট সভার পর উপাচার্য সাংবাইদকেদর বলেন, “সে যে অপরাধ করেছে, তা সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার মতোই।” সিন্ডিকেট সভা চলার মধ্যেই এই শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিভাগের শিক্ষার্থীরা সিনেট ভবনে মানববন্ধন করে। অন্যদিকে অধ্যাপক সাইফুলকে কলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে আরেক দল।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল দাবি করেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তার কারণ দর্শাতে সিন্ডিকেট নোটিস দেবে অধ্যাপক সাইফুলকে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি করবে। তার সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধ্যাপক সাইফুলকে চিরতরে বহিষ্কার করতে হবে। তা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারা।
রাতে সিন্ডিকেট সভার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কলা ভবনে অপরাজেয় বাংলার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক সাইফুলকে চিরতরে বহিষ্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সাতদিন সময় বেঁধে দেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শওকতুল ইসলাম বলেন, “এই সময়টাতে (সাত দিন) আমরা অহিংসভাবে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।”
এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সাত দিনের মধ্যে এই শিক্ষককে স্থায়ী বরখাস্ত করা না হলে ‘সহিংস’ আন্দোলনেও পিছপা হবে না বলে হুমকি দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অধ্যাপক সাইফুল গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীকে বাসায় ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এরপর রোববার ওই ছাত্রী উপাচার্য ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। মোবাইল ফোনে ধারণ করা ‘অধ্যাপক সাইফুলের অনৈতিক প্রস্তাবের’ একটি অডিও ওই অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করে দেন তিনি।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে অধ্যাপক সাইফুলকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। দুপুরে সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী।প্রক্টরের হস্তক্ষেপে সাময়িক মুক্ত হয়ে বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমসহ সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে সাময়িক অব্যাহতি চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি লেখেন অধ্যাপক সাইফুল। বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই অধ্যাপক সাইফুল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি অব্যাহতি চেয়েছেন।”
অধ্যাপক সাইফুল তখন সাংবাদিকের সামনে উপস্থিত হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তিনি ‘ষড়যন্ত্রের’ শিকার। সাংবাদিকরা বিস্তারিত জানতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব না দিয়ে তিনি চুপ করে থাকেন। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ বলেন, সেই ছাত্রীর দেয়া অডিও রেকর্ড শুনে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
প্রক্টর চলে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা পুনরায় অধ্যাপক সাইফুলকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে। রাতে সিন্ডিকেট বৈঠক শেষ হওয়ার পর প্রক্টর এসে তাকে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাকে গাড়িতে তুলে দেন।