উত্তরপত্রে অন্য হাতের লিখা, ফলাফল স্থগিত
কমলগঞ্জে ৬ এসএসসি পরীক্ষার্থী ২ বছরের বহিস্কার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ
নূরুল মোহাইমীন মিল্টন ::
২০১৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেন্যু হাজী উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রে অন্য হাতের লিখা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীদের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করা হয়। বোর্ড শিক্ষার্থীদের মতামত নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা কিছুই জানে না বলে জানায়। তবে দায় এড়াতে কেন্দ্র সচিব ও হল সুপার জোরপূর্বক পাশের পরীক্ষার্থী লিখে দিয়েছে এমন মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে নেয়ায় ওই ৬ শিক্ষার্থীকে বোর্ড ২ বছরের জন্য বহিস্কার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কেন্দ্র কোড ২৫৫ এএটিএম বহু মুখী উচ্চ বিদ্যালয় শমশেরনগর ২০১৪ সালের প্রথম কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের ভেন্যু করা হয় হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ভেন্যুতে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ৩৪৬৭৬৯, ৩৪৬৮৫০, ৩৪৬৮৫২, ৩৪৬৮৫৫, ৩৪৬৯১৪, ৩৪৬৯২৬ রোল নম্বরধারী ওই ৬ শিক্ষার্থী পৃথক ৩টি কক্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ জন ও এএটিএম শমশেরনগর এর ১ জনসহ ৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার পর তাদের ফলাফল স্থগিত দেখতে পায়। পরীক্ষার্থী বাবলী খানম, জেসমিন, জাহাঙ্গীর, মাহবুবা, জগদিশ ও রাজু জানায়, ফলাফল স্থগিতের পর তারা জানতে পারে ইংরেজী ১ম পত্রের ১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে একই হাতের লেখা সনাক্ত হওয়ায় তাদের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা এ ধরণের কোন কাজ করেনি, কে বা কারা খাতায় লিখেছে তাও তারা জানেনি বলে জানায়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্র সচিব ও হল সুপার তাদেরকে পাশের শিক্ষার্থী লিখে দিয়েছে বলে কাগজে লিখিত দিতে বলেন। লিখিত দিতে আপত্তি জানালে কেন্দ্র সচিব মিহির ধর ও হল সুপার ফয়েজ আহমদ চাপ প্রয়োগ করে বলেন, পাশের জন লিখে দিয়েছে এভাবে ভূল স্বীকার করে লিখিত দেয়া হলে ফলাফল পাস দেয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ও হল সুপারের এমন আশ্বাসে কাগজে লিখিত দিতে বাধ্য হন। কিন্তু এরপর ২৪ জুলাই শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরিত পরিপত্রে জানা যায় ২০১৪ সালের পরীক্ষা বাতিল এবং ২০১৫ সালের পরীক্ষায়ও অংশ নেয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, কেন্দ্র সচিব ও হল সুপার দায় এড়াতে প্রতারণা করে তাদের সন্তানদের জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে নেয়ায় ২ বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান।
অভিযোগ বিষয়ে সহকারী কেন্দ্র সচিব হাজী মোহাম্মদ উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই ভেন্যুর দায়িত্বে হল সুপার ফয়েজ আহমেদ যথা সময়েই উত্তরপত্র বুঝে নিয়ে যান। এখানে কোন সমস্যা হয়নি। হল সুপার ফয়েজ আহমদ বলেন, কেন্দ্র সচিবের কথামতোই সকল কাজ করা হয়েছে। তবে এ ধরণের ঘটনায় তদন্তপূর্বক সত্যতা বেরিয়ে আসা উচিত।
কেন্দ্র সচিব মিহির ধর চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের মিথ্যা বলতে তিনি কোন কথা বলেন নি। পরীক্ষা হলে হয়তো এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি বোর্ডে লিখিত দিয়েছেন বলে জানান।
কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বোর্ড সকল ক্ষমতার অধিকারী। বোর্ডে শিক্ষার্থীরা স্বীকার করেছে পার্শ্ববর্তী শিক্ষার্থী লিখে দিয়েছে। তবে তিনি ইউএনও’র কাছে আসা অভিভাবকদের অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে তদন্ত করে ইউএনওকে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল মান্নান খান বলেন, বোর্ডের কাছে শিক্ষার্থীরা মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েছে পাশের জনে লিখে দিয়েছে। সে মোতাবেক শিক্ষার্থীদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটি তাদের ১৪ সালের পরীক্ষা বাতিল করেছে পাশাপাশি ২০১৫ সালের পরীক্ষায়ও তার অংশগ্রহণ করতে পারবে না। ২০১৬ সালে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।