কমলগঞ্জে এক ভণ্ডের কাণ্ড
‘পীর’ সাজতে পথচারীদের লাঠি দিয়ে আক্রমণ!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি
কমলগঞ্জে এক ভণ্ড নিজে ‘পীর’ সাজতে গিয়ে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে লাঠি দিয়ে পথচারীদের উপর আক্রমণ করছে। তার ভয়ে ৫টি গ্রামের মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। স্কুলে যাওয়া-আসা কমিয়ে দিয়েছে একটি প্রাইমারী স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বর্তমানে সে আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে। পঞ্চাশোর্ধ এই ভণ্ডের নাম শাহজাহান। সে উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের গকুলনগর গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভণ্ড শাহজাহান প্রায় ৩/৪ বছর ধরে বিভিন্ন মাজারে ঘোরাঘুরি করে নিজেকে ‘পীর’ দাবি করে লোকজনকে তার নিকট আসার কথা বলে। লোকজন তার কথা না শুনলে সে তাদের উপর ক্ষেপে গিয়ে আক্রমণ করে বসতো। তবে এতেও লোকজনকে বাগে আনতে না পেরে সে একটি অভিনব কৌশলের আশ্রয় নেয়। গত তিন সপ্তাহ ধরে সে তার বাড়ীর সামনের কামুদপুর-ছলিমবাজার সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে পথচারীদের নিকট থেকে জোরপূর্বক সালাম আদায় করে। কেউ স্বেচ্ছায় সালাম না দিলে সে তার হাতের লাঠি দিয়ে আক্রমণ করে বসে। এছাড়া পথচারীদের আটকিয়ে মানসিক ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা ও মালামাল হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৩ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার হাতে প্রায় অর্ধশতাধিক পথচারী আহত হয়েছেন। আহতের তালিকায় সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র, সমাজকর্মী, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার স্থানীয় ও অপরিচিত লোকজন আছেন। তার এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ড এই রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করা স্থানীয় মোহাম্মদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয় কামুদপুর গ্রামের সাংবাদিক শাহিন আহমদ ও এলাকার লোজকন জানান, ‘আসলে শাহজাহান কোন পাগল নয়। সে পাগলের ভান করে। সে পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। মাস দুয়েক অন্য এলাকায় গিয়ে কাজ করে টাকা উপার্জন করে। আর বাড়ী আসলেই শুরু করে পাগলামীর অভিনয়।’
স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, সে এমন পাগল যে তার স্ত্রী, সন্তান, ভাই বোনদের প্রহার করে না। তার খাওয়া দাওয়া সব ঠিক আছে। সে নিজেকে ‘পীর’ বলে পরিচয় দেয়। পথচারীরা সালাম না দিলেই তার উপর আক্রমণ করে বসে।
মোহাম্মদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ূব আলী বলেন, এই ভণ্ডের আতঙ্কে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে চাচ্ছে না। ফলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।
আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক (বাদশাহ) ভণ্ড শাহজাহানের প্রহারে অনেকেই আহত হয়েছেন একথা স্বীকার করে বলেন, তার অস্বাভাবিক আচরণে আলীনগর চা বাগান, গকুলনগর, কামুদপুর, লাংলিয়া ও শ্রীনাথপুর গ্রামের মানুষ অতিষ্ট। এ ঘটনাটি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন বলেও জানান।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কমলগঞ্জ থানার এসআই জাহিদুল হক ভণ্ড শাহজাহানের রাস্তায় অবস্থান নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশের একটি দল গকুলনগর গ্রামে পাঠানোর পর সে আত্মগোপন করেছে। তবে পরবর্তীতে সে যাতে আর রাস্তায় অবস্থান নিতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।