গানে-গানে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমকে স্মরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৫:১১ পূর্বাহ্ণ
সুনামগঞ্জ সংবাদাতা ::
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ভক্তকে কাঁদিয়ে ২০০৯ সালের এই দিনে বাউল সম্রাট চলে যান না ফেরার দেশে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার শেষ ইচ্ছা ‘শাহ আবদুল করিম সংগীতালয়টি এখনও পূর্ণতা পায়নি। গড়ে উঠেনি সংগীতালয়ের পাশে বাউল একাডেমি।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল সম্রাটের শেষ ইচ্ছার বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভক্ত আর শিষ্যদের মাঝে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। চারদিকে সুবিশাল হাওর আর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালনী নদীর তীরে বেড়ে ওঠা আবদুল করিম শিশুকাল থেকেই একজন বাউল। তিনি প্রায় দেড় হাজার গান মানুষের জন্য লিখে গেছেন। শুধু বাউল গান নিয়ে মেতে থাকেননি তিনি। দেশের প্রতিটি দুর্যোগকালে গান গেয়ে মানুষকে সংগঠিত করেন। বাউল সম্রাট অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার শেষ ইচ্ছা ছিল গানের বিদ্যালয়টি পূর্ণতা লাভ করবে। বিদ্যালয়ের পাশের গড়ে উঠবে বাউল একাডেমি। এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়ে বাউল শিল্পীরা শুদ্ধ সুর ও উচ্চারণে তার গান গেয়ে বেড়াবে বাংলার গ্রাম থেকে গ্রামে।
মৃত্যুর ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণে ন্যূনতম কাজ হয়নি। বাউল সম্রাটের একমাত্র পুত্র বাউল শাহ নূর জালাল বলেন, বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে এসে সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বাবার শেষ ইচ্ছা ‘শাহ আবদুল করিম সংগীতালয়টির চালু ও এর পাশে বাউল একাডেমি তৈরির ঘোষণা দেন। আমিও সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যখনই যোগাযোগের সুযোগ পাই বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিই।
বাউল সম্রাটের শিষ্য ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে শাহ আবদুল করিম চরম আর্থিক অভাবে থেকেও সংগীতকে ভালবেসে জন্মভিটা উজানধলে নিজের এক খণ্ড জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন শাহ আবদুল করিম সংগীতালয়। তার স্বপ্ন ছিল এখানে ভক্ত-শিষ্যরা বাউল গানের সুর ও বাণী ঠিক রেখে গান চর্চা করবে। তাঁর জীবদ্দশায় ভক্তবৃন্দ তাকে ঘিরে এই বাউল একাডেমিতে গান পরিবেশন করতো। নতুন প্রজন্মের অনেকের বাউল গান চর্চায় আগ্রহ থাকলেও সংগীত বিদ্যালয়ের পূর্ণতা লাভ না করায় এবং বাউল একাডেমি স্থাপন না করায় অনেকেই সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শাহ আবদুল করিমের ভক্ত ও নতুন প্রজন্মের বাউলরা জানান, শাহ আবদুল করিম গণমানুষের বাউল ছিলেন। তিনি নিরন্ন মানুষের জন্য দুঃখজয়ের মন্ত্রগীত রচনা করেন। কিন্তু তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে কেউ এগিয়ে আসছে না। আমাদের দাবি আগামী মৃত্যু বার্ষিকীর আগে বাউল সম্রাটের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে সরকার এগিয়ে আসবে। এদিকে, তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুরে মিলাদ মাহফিল ও বিকালে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ‘শাহ আবদুল করিম সংগীতালয়ে’।