বিধবা ভাতায় অনেকেই এখন সাবলম্বী
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ
মহ্সীন মুরাদ
‘বিধবা হয়েছি অনেক আগেই। ছেলে সন্তান না থাকায় এখন ভাইয়ের কাছেই থাকি। ভাইয়ের পরিবার চালনার পাশাপাশি সে আমার ডাক্তারি খরচ চালিয়ে যেতে পারছে না তা আমি নিজেই দেখছি। এতে কষ্ট হচ্ছে এ পরিবারেরও। গত ৩ বছর যাবত তিন মাস পরপর আমি বিধবাভাতা পাচ্ছি। এ টাকাতে ঔষধের পাশাপাশি ভাইয়ের পরিবার খরচের জন্য মাঝে মাঝে দুই একশ টাকা দেই। এজন্য আমি খুবই সন্ত্তোষ্ট। তবে সরকার যদি এ ভাতার টাকার পরিমাণ আরো কিছু বাড়ানোর ব্যবস্থা করেন তাহলে আমার মতো আরো অনেকের উপকার হবে।’
কনকপুর ইউনিয়নের মামরকপুর গ্রামের বাসিন্দা (বিধবা) ফাতেমা বেগম এ কথাগুলো বলেন। তিনি বর্তমানে আমতৈল ইউনিয়নে মেয়ের বাড়ি থাকেন। বয়স ৯০ হবে বলে জানান।
সদর উপজেলার প্রতিটা ইউনিয়নেই যাচাই-বাচাই করে পূর্ব আবেদকৃত বিধবাদেরকে মনোনিত করে সুষ্ঠভাবেই ভাতা দেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন রেকর্ড অনুযায়ী তাদের অনেকের বয়স ই ৩২ থেকে ৬০ এর ভিতরে। তবে সাক্ষাত পাওয়া একজনের বয়স আনুমানিক ৯০ বলে জানা গেছে।
শুধুমাত্র যারা বিধবাভাতা পাওয়ার যোগ্য, ঠিক তাদেরই হাতেই পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন ইউনিয়নের দায়িত্বশীলরা। তবে চাহিদার তুলনায় ভাতার সংখ্যা কম থাকায় আবেদনকারী সবাইকে একসাথে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অপেক্ষমান তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের আগামীতে দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাবে যারা এ ভাতা পেয়েছেন তাদের অনেকেই এ ভাতা পেয়ে সাবলস্বী ও সন্তুষ্ট। এ ভাতার সংখ্যা আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ভোক্তভোগীরা। সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট কাগবলা ও আমতৈল ইউনিয়ন ঘুরে এসব তথ্যে পাওয়া গেছে।
সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন থেকে জানা যায়, এ বছর ইউনিয়নের ভোক্তভোগীদের জন্য ৯০টি বিধবা ভাতা বরাদ্দ করা হয়েছে। ১৪ জন বিধবার হাতে ভাতা পৌঁছিয়েছেন তারা। কিছুদিনের মধ্যেই বাকীদের হাতে পৌঁছানো হবে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। সেখানে চাহিদা অনুপাতে নামের সংখ্যা বেশি থাকায় সবাইকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাদের দেয়া যায়নি আগামী পর্বে তাদের দেয়া হবে এ আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপ।
এদিকে, উপজেলার ৯নং আমতৈল ইউনিয়নে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১৪ জনকে বিধবাকে ভাতা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকের নামে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করা হয়েছে। তারা সবাই ই নিজ নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে তিন মাস পর পর মাসিক ৩০০ টাকা করে ৯০০ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন সচিব আব্দুল বারি।
অন্যদিকে, ৪ নং কাগাবলা ইউনিয়নে ৯ জন দরিদ্র বিধবাকে এ ভাতা দেয়া হয়েছে। তবে অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছে অসংখ্য নাম। এই এলাকায় ভাতার সংখ্যা আরো বাড়ানোর জন্য দাবি রয়েছে অনেক ভোক্তভোগীসহ চেয়ারম্যান সদস্যদের।
কাগাবলা ইউনিয়ন থেকে ভাতা পেয়েছেন শেখের ইজরা গ্রামের বাসিন্দা মনজু রাণী ধর (৪৭), বরুতলার শিরিনা বেগম (৩২) তারা বলেন, তাদের অনেকেরই পরিবারের লোক সংখ্যা ৫ থেকে ৭ জন। স্বামী নাই এ জন্য অনেকেই পর মুখাপেক্ষি। কারোর দু একটা গরু কিংবা ছাগল রয়েছে। এছাড়া বাড়তি আয় কারোর ই নাই। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ই তাদের বর্তমান জীবন যাপন। এখানে ভাতার টাকা পেয়ে পরিবারের খরচ চালানো ছাড়াও কিছু ঔষধ-পথ্য কিনে খেয়ে থাকেন। এ ইউনিয়ন থেকে কুসুম বিবি (৫২), হাজেরা বিবি (৪৭) ও সামছুন্নাহার বেগম (৪৫) ভাতা পেয়েছেন।
কাগাবলা ইউনিয়নের বুরুতলা এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার জালাল আহমদ জানান, আমার এলাকায় বিধবা ভাতা পাওয়ার জন্য আরো অনেক চাহিদা আছে। এ বছর মাত্র ১টি বিধবাভাতা দিয়েছি। সরকারিভাবে এ ভাতার সংখ্যা কম থাকায় চাহিদা অনুপাতে পৌঁছানে যাচ্ছে না।
চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের (বালিকান্দি) সদস্য মো. শওকত বলেন, আমার এলাকায় ১ টি বিধবা ভাতার কার্ড দিয়েছি। আরো ৩০টির মতো চাহিদা আছে যাদের নাম অপেমান তালিকায় রয়েছে।
৪ নং ওয়ার্ডের (গুজারাই) সদস্য আহমদ আলী জানান, অপেমান তালিকায় যদিও অনেকের নাম আছে। সবাইকে আমরা দিতে পারছি না। আমার ওয়ার্ডে এ বছর ৪টি বিধবা ভাতার কার্ড দিয়েছি। এ বছর আরো ৩৫টির মতো চাহিদা আছে।
আমতৈল ইউপি সচিব আব্দুল করিম জানান, আমাদের ইউনিয়ন থেকে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের ১৪টি বিধবা ভাতা দেয়া হয়েছে। এ গুলো সবই চেয়ারম্যান সদস্য মহিলা সদস্যদের নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মনোনিত করে তাদের হাতে পৌঁছানো হয়েছে।
চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাদশার সাথে এ বিষয়ে আলাপ হলে তিনি বলেন, আমরা সব সময়ই এলাকার বয়স্ক, বিধবা অসহায় নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমার ইউনিয়ন থেকে সব ভাতা মিলিয়ে প্রায় ৬শ’র উপরে ভাতা দেয়া হয়েছে। তার মাঝে এ বছর বিধবা ভাতা দেয়া হয়েছে ১৪ টি। অপেমান তালিকায় অনেকের নাম আছে। আমরা সেগুলো দেয়ার জন্য যাচাই করছি। যাদের একান্ত প্রাপ্য তাদেরকেই দেয়া হবে।
আমতৈল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুজিত দাশ বলেন, আমাদের ইউনিয়নে বিধবা ভাতা পাওয়ার মতো অনেকেই আছেন। আমি বলতে পারি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি ওযার্ডে ১০ থেকে ৩০ জন বিধবা আছেন । এ বছর আমরা ১৪ টি ভাতা দিয়েছি যদি সরকার ভাতার সংখ্যা আরো বাড়ানোর কোন পদপে নেন তাহলে আমার ইউনিয়নসহ সবাই উপকৃত হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম খানের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধি মাতৃত্বকালীনসহ সরকারের সমাজ কল্যাণমূলক যত ধরনের ভাতা আছে, তা সবই সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। প্রতিটি ইউনিয়নে জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে সে ইউনিয়নের ভাতা বরাদ্দ করা হয়। এখানে সরকার যদি ভাতা বাড়ানোর মতো কোন পদপে নেয় তাহলে বাড়ানো যেতে পারে।