জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ‘এন্টিবায়োটিক’-এর চরম অপব্যবহার চলছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১২:০২ অপরাহ্ণ
গ্রিক শব্দ ‘এন্টি’ ও ‘বায়োস’ থেকে ‘এন্টিবায়োটিক’ শব্দটি এসেছে। এন্টি অর্থ বিপরীত ও বায়োস অর্থ জীবন। মূলত এন্টিবায়োটিক জীবিত ব্যাকটেরিয়া তথা অণুজীবের বিপরীত কাজ করে। যেসব রোগ সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়, তা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ের জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এজন্য ভাইরাসজনিত রোগের বিপরীতে এন্টিবায়োটিক কার্যকরী নয়। এক জীবাণুর বিরুদ্ধে যেমন সব এন্টিবায়োটিক কাজ করে না, তেমনি সব জীবানুর বিরুদ্ধে একই এন্টিবায়োটিক কাজ করে না।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সঠিক নীতিমালার আলোকে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এদেশে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে কোন নীতিমালা নেই। নিম্নমানের এন্টিবায়োটিক উৎপাদন করে বেশির ভাগ কোম্পানি তা বিক্রি করছে মাত্রাতিরিক্ত মূল্যে। শুধু নিম্নমানের এন্টিবায়োটিক বাজারজাত করেই কোন কোন কোম্পানি কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০১১ এর উপপাদ্য বিষয় ছিল—জীবাণুনাশকের অকার্যকারিতা ও এর বিশ্বব্যাপী বিস্তার। অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কমিয়ে আনা।
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলতে বোঝায় এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়া। কোনো বিশেষ জীবাণুর জন্য যেসব গুণাবলী ওষুধে থাকার কথা তা ঠিক রয়েছে এবং তা সঠিকভাবে সংরক্ষণও করা হয়েছে কিন্তু সবকিছুর পরও ওই জীবাণুর বিপক্ষে এটি আর কাজ করতে পারছে না! কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বিনা প্রয়োজনে যখন তখন এন্টিবায়োটিক সেবন।
অথচ এদেশে এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে কোন নীতিমালা নেই। নিম্নমানের এন্টিবায়োটিক উৎপাদন করে বেশির ভাগ কোম্পানি তা বিক্রি করছে মাত্রাতিরিক্ত মূল্যে। শুধু নিম্নমানের এন্টিবায়োটিক বাজারজাত করেই কোন কোন কোম্পানি কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই অনেকে এন্টিবায়োটিক বাজারজাত শুরু করে দেয়। এন্টিবায়োটিক ব্যবহার দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরিভাবে নীতিমালা থাকা দরকার। এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে মানবদেহে রোগ-জীবাণু এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। রোগ প্রতিরোধে এন্টিবায়োটিক কাজ করছে না। এ কারণে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে বেশি। সব মিলিয়ে দেশের জনগণ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে বিপদের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিডনি নষ্ট হওয়া রোগী এ কারণে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অভিমত ব্যক্ত করেন। এন্টিবায়োটিক এর অপব্যবহারের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে মানবদেহে রোগ-জীবাণু এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। রোগ প্রতিরোধে এন্টিবায়োটিক কাজ করছে না। এ কারণে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে বেশি। সাধারণ রোগ বালাই কিংবা কথায় কথায় এন্টিবায়োটিকের সহজ ব্যবহারে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার যখন ঠিকমত হয় না অর্থাৎ সঠিক ডোজ না হওয়া বা সঠিক এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার না করা বা প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা। তখন জীবাণু সেই এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে এমন কিছু পরিবর্তন নিজের মাঝে আনে সেজন্য আর ওই এন্টিবায়োটিক কার্যকরী হয় না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, একটা বা একজন মানুষের শরীরের জীবাণুতে যে পরিবর্তন আসে, একটা এলাকার সব জীবাণুতেই কি সেই পরিবর্তন আসবে? এলেও তা কীভাবে? এর উত্তর হচ্ছে, সেই পরিবর্তনটি এলেই হবে।
কেননা, যে জীবাণু নিজের জেনেটিক কোডে পরিবর্তন এনে রেজিস্ট্যান্ট হয়, সেই জীবাণু বিভিন্নভাবে অন্য জীবাণুর মাঝে এই জেনেটিক কোড ছড়িয়ে দিতে পারে অথবা একটি এক্সট্রা জেনেটিক কোড ছড়িয়ে দিতে পারে পরিবেশে, পরবর্তী সময়ে পরিবেশের অন্যান্য জীবাণু সেই কোড গ্রহণ করে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যেতে পারে।
আমাদের করণীয় :
WHO-এর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০১১ অনুযায়ী—
— ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে উল্লিখিত ডোজ ও সময় অনুসারে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করুন।
— ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন কোন এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়েছে।
— সর্দি-কাশি এবং আধিকাংশ ডায়রিয়ার চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয় না, এর জন্য তরল পানীয় ও বিশ্রামই যথেষ্ট।
— অতীতে অসুস্থতার জন্য দেয়া এন্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আবার ব্যবহার করা যাবে না।
সব মিলিয়ে দেশের জনগণ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে বিপদের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিডনি নষ্ট হওয়া রোগী এ কারণে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞ চিকৎত্সকরা অভিমত ব্যক্ত করেন। এদেশে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি টাকার সিপ্রোফ্লোক্সাসিলিন ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ৮০ ভাগ চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই।
এক শ্রেণীর ডাক্তার কিংবা গ্রামাঞ্চলে হাতুড়ে ও ওষুধ বিক্রেতা সাধারণ জ্বরে এন্টিবায়োটিক বিক্রি করছে। এতে রোগী ভাল হয় ঠিকই। কিন্তু শরীরে ক্ষতির পরিমাণ হয় সর্বাধিক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত এন্টিবায়োটিক যেন বিক্রি না করতে পারে, সেই নীতিমালা প্রণয়ন অপরিহার্য।