গ্রাম আদালতের সুফল ভোগ করছে জনগণ : দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা হয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০১৪, ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ
মহ্সীন মুরাদ
নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয় গ্রাম আদালতের বিচার কার্যক্রম। সদর উপজেলার আওতাধীন কাগাবলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় গ্রাম আদালতে তিন ধরনের মামলা গ্রহণ করা হয়। আগের তুলনায় বর্তমানে এ আদালতে মামলার সংখ্যা কমে গেছে অনেকগুণ। বেশিরভাগ বিচারই ইউনিয়নের বাইরে সালিশির মাধ্যমে শেষ হয়ে যায়, এজন্য আর মামলার দরকার পরে না বলে জানান কর্তৃপ। তবে ইউনিয়ন পরিষদে করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয় বলে তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে জানা যায়। আর এতে গ্রাম আদালতের সুফল ভোগ করছে জনগণ।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ এর জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৩টি মামলা হয়েছে। এ মামলাগুলো লেনদেন, স্বামী স্ত্রী ঝগড়া-বিবাদ সংক্রান্ত। তবে মারামারি, চুরি সংক্রান্ত মামলাও ইউনিয়ন অফিসের রেকর্ড খাতায় দেখা যায়। প্রতি মাসে যদিও ইউনিয়ন মিলনায়তনে বিভিন্ন রকমের সমস্যা নিয়ে ৫ থেকে ৮টি বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। সেগুলোর তথ্য রাখা হয় না বলে জানা যায়।
সরেজমিন ঘুরে ও ইউনিয়ন থেকে প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা যায়, গ্রাম আদলতে ৩ ধরনের মামলা গ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে দেওয়ানী, ফৌজদারি, পারিবারিক দাঙ্গা সংক্রান্ত মামলা। দেওয়ানী মামলা গ্রহণের জন্য ৪ টাকা, ফৌজদারীতে ২ টাকা, আর পারিবারিক মামলার দায়েরের জন্য ২০ টাকা ফি নেয়া হয়।
কাগাবলা ইউনিয়নে ২০১২ সালে ৩৮টি মামলা হলেও ১৩ থেকে ১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত মামলা হয়েছে মাত্র ৩ টি।
এ ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত মোট ৪১টি মামলার নিষ্পত্তি করেছে গ্রাম আদালত। এতে চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৬ জুলাই শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভবানী চাতল গ্রামের ফারুক মিয়া বাদী হয়ে কাগাবলা ইউনিয়নের শেখের ইজরা এলাকার বিবাদী আলিম মিয়া নামক ব্যক্তির উপর ২৫ হাজার টাকার লেনদেন সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন। ২৩ জুলাই ইউনিয়ন বিচারালয়ে ইউপি চেয়ারম্যন ফারুক আহমদ চার কিস্তিতে ইউপি সচিবের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা পাওনাদারকে দেয়ার রায়ের মাধ্যমে তার নিষ্পত্তি করেন। এ বিচারের সাি ছিলেন (বাদি পরে) ভবানী চাতলের ইদ্রিছ আলী মিতা মৃত উসমান আলী, (বিবাদী) ইউনিয়নের রাতগাঁও এলাকার রুপ মিয়া, শেখের ইজরা গ্রামের শেখের ইজরা গ্রামের ডালিম মিয়া পিতা মৃত মতলিব মিয়া।
অপর আরেকটি স্বামী স্ত্রী দাঙ্গা সংক্রান্ত মামলা ধারাবাহিকভাবে ৩, ৮, ১৫, ২২ জুন কয়েদিন বসার পর গত ৩ জুলাই তার মিমাংসা করা হয়। ৩ জুন নবীগঞ্জ উপজেলার পানি উমদা ইউনিয়নের মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে সবুজ মিয়া বাদী কাগাবলা ইউনিয়নের নিমারাই গ্রামের জয়নাল মিয়ার মেয়ে (স্ত্রী) পারুল বেগমের উপর একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বিবাদী পরে কয়েকবার অনুপস্থিতির কারণে এক মাস পরে এর রায় দেন চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
এ মামলার বাদি সবুজ মিয়া জানান, আমাদের এ সমস্যা অনেক আগেই সমাধান হতো যদি আরো আগে আমরা দুই প মুখোমুখি হয়ে যেতাম। তিনি কাগাবলা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়নবাসীকে ধন্যবাদ জানান সুন্দর একটি সমাধানের জন্য।
ইউনিয়নের ২নং বুরুতলা ওয়ার্ডের সদস্য জালাল আহমদ বলেন, আমাদের এলাকার অনেকগুলো সমস্যার সৃষ্টি হয়, তারমধ্যে বেশিরভাগ সমস্যার বিচারই আমরা ইউনিয়নের বাইরেই করে ফেলি। এ জন্য লোকজন ইউনিয়নে আর মামলা করার দরকার পরে না। আমাদের এ সমাধানে এলাকার জনগণ সন্তুষ্ট আছেন।
নওমৌজা কমিটির সেক্রেটারি বুরুতলা এলাকার মুরব্বি ইমন মোস্তফা জানান, আমাদের এলাকার অনেকগুলো সমসা ঘটে থাকে। সেগুলোর মধ্যে যদি ১০০টি সমস্যা হয় তার মাঝে ৮০টির সমাধানই আমরা ইউনিয়ন পর্যন্ত না গড়িয়ে নিজ এলাকায়ই তার সমাধান করে থাকি। মাঝে মাঝে আমাদের থানায় ডেকে নিয়ে বলা হয় এটা সমাধান করে দেয়ার জন্য। সেগুলোর সমাধান করে থাকি। আমাদের রায়ে কারো কোন হস্তপে যদিও নেই তবে গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী স্বাধীন করার জন্য আমাদের দাবি থাকবে।
ইউনিয়ন সচিব আব্দুল বারী জানান, ছোট-খাটো সমস্যার সৃষ্টি হলে ইউনিয়নের সদস্যসহ এলাকার মুরব্বিরা মিলেই তার সমাধান করে দেন। নিজ এলাকা ছাড়া বাইরের কোন বিচার কিংবা সমস্যা থাকলে তার জন্য অনেকে মামলা করেন। প্রতি মাসেই আমাদের ইউনিয়নের বিচারালয়ে ৫ থেকে ৮টি বিচার হয়ে থাকে সে বিচারগুলো এমনিতেই শেষ হয়ে যায়। এ জন্য আমরা খাতায় আর তার কোন রেকর্ড রাখি না। তবে মামলা করলে অবশ্যই সেগুলোর রের্কড রাখা হয়।
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, আমাদের এ ইউনিয়নে আগে মামলা হতো যেমন ২০১২ সালেও অনেক হয়েছে। বর্তমানের তার অনেকটা কমে গেছে কেননা যে কোন ধরনের সমস্যা হলে আমরা সালিশের মাধ্যমে তার সমাপ্তি করি। এরকম বিচার মাসে অন্তত ১০টি করতে হয়।
গ্রাম আদালতকে আরো শক্তিশালী করতে হলে আর কী প্রয়োজন বলে মনে করেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্রাম আদালতকে আরো শক্তিশালী করতে হলে গ্রাম আদালতের আরো মতা বৃদ্ধি করতে হবে। এতে শাস্তির আওতা বাড়ানো যাবে। ফলে একই বিষয়ের মামলার পুনরাভিত্তি ঘটবে না। এতে প্রকৃতপে জনগণই উপকৃত হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহি অফিসার আশরাফুল আলম খান বলেন, স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানরাই আলোচনা সাপেে গ্রাম আদালতকে আরো শক্তিশালী করতে পারেন। তবে জেল জরিমানার যে বিষয়টি সম্পূর্ণ ম্যাজিস্ট্রেসি আওতাভুক্ত। যেহেতু ইউনিয়নে ম্যাাজিস্ট্রেট ক্যাটাগরির কেউ উপস্থিত থাকেন না তারা জেল দিতে পারেন না। যদি এমন মামলা হয় যে আসামী জেল সাজার উপযোগী সে েেত্র গ্রাম আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতে মামলা প্রেরণ করার ব্যবস্থা রয়েছে।
গ্রাম আদালত শক্তিশালী রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আর গ্রাম আদালত এমনিতেই অনেকটা শক্তিশালী আছে। অনেক কেইস আছে যা উচ্চ পর্যায়ের আদালত থেকে বদলি করে গ্রাম আদলতেও পাঠানো হয়। আর সে বিচারের রায় দেয় গ্রাম আদালত। তাই গ্রাম আদালতকে আরো শক্তিশালী করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ের লোকজনই আলোচনা সাপেে ব্যবস্থা নিতে হবে।